
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৌসুমি বায়ু। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের আবহাওয়ার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এই লঘুচাপকে কেন্দ্র করে আগামী কয়েক দিন সারাদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। বিশেষ করে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ এবং কোথাও কোথাও অতিভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত নিয়মিত বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বর্তমানে রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি শাখা বিস্তার ঘটিয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগরে। ফলে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা মাঝারি শক্তিশালী অবস্থায় বিরাজ করছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতির কারণে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর আর্দ্রতা জমছে, যা আগামী কয়েক দিন দেশে টানা বৃষ্টিপাত ঘটাবে। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে দমকা হাওয়া ও ভারি বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বুলেটিন অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের বহু এলাকায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত এবং বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় একই ধরনের বৃষ্টি হবে।
বিশেষভাবে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলে সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।
বৃষ্টির কারণে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে। ফলে কয়েক দিনের প্রচণ্ড গরম কিছুটা প্রশমিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে রাতের তাপমাত্রা তেমন পরিবর্তিত হবে না। আবহাওয়াবিদদের ভাষায়, "দিনের বেলায় আবহাওয়া কিছুটা শীতল লাগবে, কিন্তু রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।"
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মতোই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বজায় থাকবে আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত। রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ এলাকায় বারবার বৃষ্টি হতে পারে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু জায়গাতেও বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। তবে পাঁচ দিন পর বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমে আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়কার বৃষ্টিপাত আমন ধানের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে অতিভারি বর্ষণ হলে মাঠে জমে থাকা পানি ধানের চারা নষ্ট করার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। শহরাঞ্চলে ভারি বর্ষণের কারণে সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকায়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, টানা বৃষ্টির কারণে ডায়রিয়া, ডেঙ্গু ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। ফলে নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থানরত ছোট নৌকা ও মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে সমুদ্রে না যেতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন জেলেদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। সাগরে লঘুচাপ আরও ঘনীভূত হলে তা নিম্নচাপ বা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পরবর্তী দিনগুলোতে সমুদ্র উত্তাল হতে পারে।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া এই লঘুচাপ আগামী কয়েক দিন বাংলাদেশের আবহাওয়াকে বৃষ্টিমুখর করে তুলবে। এ সময় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হবে, তাপমাত্রা কিছুটা কমবে এবং জনজীবনে শীতলতা আসবে। তবে অতিবৃষ্টি কৃষি ও নগর জীবনে দুর্ভোগও ডেকে আনতে পারে। তাই আবহাওয়া অধিদফতরের পরামর্শ মেনে চলা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ