
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ডানপন্থি রাজনৈতিক কর্মী ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডে যুক্ত সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে ওই সন্দেহভাজনের নাম বা পরিচয় প্রকাশ করেননি ট্রাম্প। এ বিষয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানান তিনি। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি অত্যন্ত নিশ্চিতভাবে মনে করি, আমরা তাকে হেফাজতে নিয়েছি। তার খুব কাছের একজন তাকে আত্মসমর্পণ করিয়েছে এবং আজই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।”
সিএনএনের চারটি আলাদা সূত্র জানিয়েছে, এক ব্যক্তিকে আসলেই হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুলিবর্ষণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে আরও দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, তবে পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ইউটা রাজ্যের ইউটা ভ্যালি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চার্লি কার্ক বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এসময় হঠাৎ করেই এক বন্দুকধারী গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
কার্ক ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং কট্টর ডানপন্থি ছাত্র সংগঠন “টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ”-এর প্রতিষ্ঠাতা। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রিপাবলিকান মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তাই তার মৃত্যু রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর শোকের সঞ্চার করেছে।
হত্যার পরপরই দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই বিশাল অভিযানে নামে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন এক ব্যক্তির ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে।
ছবিতে দেখা যায়—এক তরুণ মাথায় ক্যাপ, চোখে সানগ্লাস এবং কালো রঙের লম্বা হাতাওয়ালা পোশাক পরে আছেন। ওই ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য দিতে পারলে এক লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
এছাড়া, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাইফেলও উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি ছিল স্নাইপার ধাঁচের রাইফেল, যা দূর থেকে নির্ভুলভাবে গুলি করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
চার্লি কার্ক হত্যার পর মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। রিপাবলিকান শিবির একে "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড" আখ্যা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন যে, চার্লি কার্ককে মরণোত্তর প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম প্রদান করা হবে।
মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষক জোসেফ মার্টিনেজ বলেন, “চার্লি কার্ক শুধু একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না, বরং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রিপাবলিকান মতাদর্শের জন্য প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার হত্যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র হবে।”
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হেনরি ওয়ালেস বলেন, “এটি নিছক হত্যাকাণ্ড নয়; এটি মার্কিন সমাজে বেড়ে ওঠা চরম রাজনৈতিক বিভেদের প্রতিফলন। এখন তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে হত্যার পেছনে কোনো সংগঠিত ষড়যন্ত্র ছিল কি না।”
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক হওয়া সন্দেহভাজনকে আজ বা আগামীকাল আদালতে তোলা হতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো তার নাম, বয়স কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করেনি। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, চার্লি কার্কের মৃত্যুর পর রিপাবলিকান সমর্থকরা দেশজুড়ে শোক মিছিল ও সমাবেশ করছে। ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ