
ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল প্রত্যাশিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভোট গণনা চলাকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, “গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোট গণনা এখনো চলছে। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে নানা ধরনের কথা, গুজব ও প্রশ্ন উঠেছে। একজন শিক্ষক এবং নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল কমিশনকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করা। আমি সে অনুযায়ী মতামত দিয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে গ্রহণ করা হয়নি।”
তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। তবে নির্বাচনের বিভিন্ন ধাপে যে অনিয়ম ও ত্রুটি হয়েছে তা পুরো প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করেছে। তার ভাষায়, “আমার দেওয়া অনেক সুপারিশ পরিবর্তন করা হয়েছে, আর গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছে।”
অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, তিনি নির্বাচনের দিন বিভিন্ন অনিয়ম ও গুরুতর ত্রুটি লক্ষ্য করেছেন, যা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ডাকে বিকেল ৪টার বৈঠকে ভোট গণনা আপাতত স্থগিত রাখার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু কমিশন তার প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানায়।
তিনি আরও জানান, “নির্বাচন কমিশন আমার মতামতের সুরাহা না করেই ভোট গণনা শুরু করে। আমি লিখিতভাবে কমিশনে আমার মতামত জানিয়েছিলাম। কিন্তু সময় ও পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে আমার পক্ষে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমি পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি।”
অন্যদিকে, একই রাতে এক বিবৃতিতে জাকসু সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রাশিদুল আলম দাবি করেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যথারীতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার ভাষায়, “ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২১টি হল সংসদের মধ্যে ১৯টির গণনা শেষ হয়েছে, অবশিষ্ট ২টির গণনা চলছে। পাশাপাশি জাকসুর ভোট গণনা চলছে এবং তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করছি রাতের মধ্যেই গণনা শেষ হবে এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে।”
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে ভোটের দিন নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি-সমর্থিত ছাত্রদলসহ মোট পাঁচটি প্যানেল এবং পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে ভোটের বৈধতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন মহল।
দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত হওয়া এই জাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন আশা জাগালেও কমিশনের ভেতর থেকে আসা পদত্যাগের ঘোষণা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের সদস্যের এমন পদত্যাগ প্রমাণ করে যে নির্বাচনের মধ্যে নানা জটিলতা ও অনিয়ম ছিল। অন্যদিকে, আরেক অংশের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভোট গণনা সম্পন্ন হয়ে ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত নয়।
অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারের পদত্যাগের ঘটনায় জাকসু নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কমিশনের ভেতরকার মতবিরোধ, অনিয়মের অভিযোগ, প্রার্থীদের বর্জন এবং ভোট গণনার ধীরগতি মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। এখন শিক্ষার্থীরা অপেক্ষায় আছেন—গণনা শেষ হলে কী ফলাফল আসে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে এই বিতর্কের সুরাহা করে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ