
ছবি: সংগৃহীত
ফুটবলের সবচেয়ে বড় মহোৎসব ফিফা বিশ্বকাপ শুরু হতে এখনো বাকি কয়েক মাস। কিন্তু বিশ্বজুড়ে সমর্থকদের উন্মাদনা এরই মধ্যে আকাশছোঁয়া। ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট আবেদন শুরুর পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জমা পড়েছে দেড় মিলিয়ন বা ১৫ লাখ আবেদন। ফুটবল ইতিহাসে এটি এক অভূতপূর্ব সাড়া বলে জানাচ্ছে আয়োজক সংস্থা ফিফা।
২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আসর। প্রথমবারের মতো ৩ দেশ যৌথভাবে আয়োজন করছে টুর্নামেন্টটি—যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডা। এছাড়া এবারের আসরে প্রথমবার অংশ নেবে ৪৮টি দল। ফলে টুর্নামেন্টে ম্যাচ সংখ্যা, দর্শক উপস্থিতি এবং বৈশ্বিক কভারেজ—সব কিছুই আগের যেকোনো বিশ্বকাপকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে টিকিট আবেদন শুরু হয় ১০ সেপ্টেম্বর। মাত্র একদিনের মধ্যেই ফিফা নিশ্চিত করে, আবেদন সংখ্যা দেড় মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। ফিফা জানিয়েছে, এই বিপুল আবেদন প্রমাণ করছে ২০২৬ বিশ্বকাপ ঘিরে মানুষের আগ্রহ কতটা তীব্র।
সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে আয়োজক তিন দেশের দর্শকদের কাছ থেকে। এরপর রয়েছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল ও জার্মানির সমর্থকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপীয় ফুটবলপাগল দেশগুলো এই আসরের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
২০২৬ বিশ্বকাপের চিফ অপারেটিং অফিসার হেইমো শিরগি বলেন, “মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ১৫ লাখ আবেদন—এটাই প্রমাণ করে ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ কত বড় এক মাইলফলক হতে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মানুষ অপেক্ষা করছে ফুটবলের এই মহাযজ্ঞে অংশ নেওয়ার।”
টিকিটের জন্য প্রাথমিক আবেদন চলবে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এর পর লটারির মতো বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য আবেদনকারীদের ১৯ সেপ্টেম্বর ই-মেইলে জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ১ অক্টোবর থেকে নির্দিষ্ট দিন ও সময়ের স্লটে অনলাইনে টিকিট কেনার সুযোগ পাবেন ফুটবলপ্রেমীরা। সরাসরি লাইনে দাঁড়িয়ে কেনার সুযোগ থাকছে না।
প্রথম ধাপ শেষে আসন খালি থাকলে নতুন করে আবেদন আহ্বান করবে ফিফা। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে ২০২৬ সালের ১৯ জুলাই ফাইনালের আগের দিন পর্যন্ত।
ফিফার ঘোষিত নিয়ম অনুযায়ী, গ্রুপ পর্বের টিকিট সর্বনিম্ন ৬০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু (প্রায় ৭ হাজার ৩০০ টাকা)। ম্যাচের গুরুত্ব ও আসনের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী দাম ধাপে ধাপে বাড়বে। প্রথম ধাপে কেবল ভিসা কার্ডধারীরাই আবেদন করতে পেরেছেন।
প্রত্যেক আবেদনকারীকে ফিফার ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে ফিফা আইডি তৈরি করতে হবে। এছাড়া আবেদন করতে হলে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৮ বছর।
শুধু একক ম্যাচ নয়, সমর্থকদের জন্য থাকছে একাধিক প্যাকেজ। ভেন্যু-নির্দিষ্ট টিকিট, দল-নির্দিষ্ট টিকিট ও ম্যাচ সিরিজের টিকিট আলাদা আলাদা মূল্যে বিক্রি করা হবে। এতে করে কেউ চাইলে তার প্রিয় দলের সব ম্যাচে উপস্থিত থাকতে পারবেন, আবার কেউ নির্দিষ্ট শহরের সব ম্যাচও দেখতে পারবেন।
খেলাধুলা বিষয়ক বিশ্লেষক রবার্ট ফিশার বলেন, “দর্শক সাড়ায় বোঝা যাচ্ছে—২০২৬ বিশ্বকাপ কেবল ফুটবলের টুর্নামেন্ট নয়, এটি হবে বিশ্বব্যাপী এক সাংস্কৃতিক উৎসব। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অভিবাসী সমাজের উপস্থিতি টুর্নামেন্টকে বহুজাতিক রূপ দেবে।”
মেক্সিকোর ক্রীড়া সাংবাদিক লুইস হেরেরা বলেন, “দীর্ঘদিন পর উত্তর আমেরিকায় বিশ্বকাপ ফিরছে। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি এক বিশাল উৎসব। আবেদন সংখ্যাই প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষ এই আয়োজনের জন্য কতটা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।”
বিশ্বকাপকে ঘিরে আয়োজক দেশগুলো ইতোমধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, স্টেডিয়াম সংস্কার এবং পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক এনএফএল স্টেডিয়াম ফুটবলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ফিফা মনে করছে, এবারের আসরে দর্শকসংখ্যা রেকর্ড ছাড়াবে এবং টিকিট বিক্রির আয় হবে ইতিহাসের সর্বোচ্চ। ফুটবল ভক্তদের কাছে ২০২৬ বিশ্বকাপ শুধু খেলা নয়, বরং এক মহাযজ্ঞ হয়ে উঠবে—যেখানে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে মানুষ একত্রিত হবে তাদের প্রিয় খেলাটির টানে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ