
ছবি: সংগৃহীত
এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের ধাক্কায় বাংলাদেশ দলের সুপার ফোরে ওঠার পথ কঠিন হয়ে গেছে। শনিবারের ম্যাচে লঙ্কানরা ৩২ বল হাতে রেখে সহজ জয়ে মাঠ ছাড়ে, যা কেবল লিটন দাসদের মনোবলকেই ভেঙে দেয়নি, বরং নেট রান রেটের জটিল সমীকরণে ফেলে দিয়েছে দলটিকে। তবে সম্ভাবনা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। নানা সমীকরণ মিললে এখনও শেষ চারে জায়গা করে নিতে পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের এই জটিল পরিস্থিতির বড় দায় শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পারফরম্যান্সে। ইনিংসের শুরুতেই ২ ওভারে দুই ওপেনারের বিদায় দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিটনরা। লিটন দাসের ২৮, জাকের আলীর অপরাজিত ৪১ আর শামীম পাটোয়ারীর ঝড়ো ৪২ রানের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৩৯ রান তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এই রান বোলারদের জন্য ছিল অনেক কম।
বল হাতে বাংলাদেশ কিছুটা আশা জাগালেও সেটি টিকল না বেশিক্ষণ। পাওয়ারপ্লেতে একটি উইকেট তুললেও লঙ্কানরা রান তুলতে থাকে সহজে। প্রথম ১০ ওভারেই দলীয় রান তিন অঙ্কে পৌঁছে যায়। তখন থেকেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় লঙ্কানদের দিকে। যদিও মাঝপথে কিছুটা ধস নেমেছিল, কিন্তু সেটি তাদের জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত সহজ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার এই জয়ে তাদের শিরোপা ধরে রাখার মিশন ভালোভাবেই শুরু হলো। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সুপার ফোরের আশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচ তাদের জন্য ফাইনালের মতো।
বাংলাদেশ যদি শেষ চারে যেতে চায়, তবে আসন্ন ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সেই ম্যাচে জয় না এলে সরাসরি বিদায় নিতে হবে লিটনদের।
১৬ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। কয়েকটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে—
বাংলাদেশ যদি আফগানিস্তানকে হারায় এবং পরে আফগানরা শ্রীলঙ্কার কাছেও হেরে যায়, তবে কোনো সমীকরণ লাগবে না। সরাসরি ৪ পয়েন্ট নিয়ে সুপার ফোরে চলে যাবে বাংলাদেশ। তখন গ্রুপের পয়েন্ট টেবিল দাঁড়াবে—শ্রীলঙ্কা ৬, বাংলাদেশ ৪, আফগানিস্তান ২।
বাংলাদেশ যদি আফগানিস্তানকে হারায় কিন্তু আফগানিস্তান শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয়, তখন আসবে নেট রান রেটের হিসাব। আফগানিস্তানের বর্তমান নেট রান রেট সবচেয়ে ভালো (+৪.৭০০), শ্রীলঙ্কার +২.৫৯৫, আর বাংলাদেশের নেট রান রেট বড় হারের পর এখন -০.৬৫০। তাই শুধু জয় নয়, বিশাল ব্যবধানে জয় চাই লিটনদের। আফগানদের বিপক্ষে বড় জয় না পেলে শেষ চারের আশা অধরা থেকে যাবে।
বাংলাদেশ যদি আফগানিস্তানের কাছে হেরে যায়, তবে কোনো হিসাব-নিকাশ থাকবে না। সেখানেই শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ অভিযান।
এশিয়া কাপের মতো স্বল্প সময়ে পয়েন্ট সমান হলে নেট রান রেটই বড় ভূমিকা রাখে। আফগানরা পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জেতায় তাদের রান রেট অনেক ভালো অবস্থানে। বাংলাদেশকে তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুধু জিতলেই চলবে না, এমন ব্যবধানে জিততে হবে যাতে নেট রান রেটে আফগানদের টপকানো যায়।
এখানেই কঠিন সমীকরণ তৈরি করেছে লিটনরা। ১৩৯ রানে থেমে যাওয়া ব্যাটিং, বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানো—সবকিছু মিলে দলের নেট রান রেট অনেকখানি নিচে নেমে গেছে। আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে তাই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, বোলিং পরিকল্পনা করতে হবে।
দলের ভেতরে এখনো মনোবল ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। তরুণ খেলোয়াড়রা ভালো লড়াই করেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। জাকের আলীর ধৈর্যশীল ব্যাটিং আর শামীম পাটোয়ারীর শেষ দিকে ক্যামিও দলে আশার আলো দেখিয়েছে। তবে মূল তারকা ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশ এখন একপ্রকার ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতিতে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততেই হবে, আর সেটিও বড় ব্যবধানে। একই সঙ্গে নজর রাখতে হবে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচের ফলাফলের দিকেও। সব সমীকরণ মিলে গেলে তবেই মিলবে সুপার ফোরের টিকিট। আর যদি ব্যর্থ হয় দল, তবে আবারও স্বপ্নভঙ্গ নিয়ে ফিরতে হবে দেশে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ