
ছবি: সংগৃহীত
দেশের রাজনৈতিক মহলে বিএনপির বিরুদ্ধে চার দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি চলছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি এবং নেজামে ইসলাম পার্টিসহ কয়েকটি সমমনা দল এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছে। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, এবং জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতকরণ।
গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতীয় সংবিধান সংশোধন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন ও ক্ষমতার কেন্দ্রিকীকরণের অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক উত্তপ্ত। সমমনা দলগুলো মনে করছে, জুলাই সনদের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং নির্বাচনের জন্য ন্যায্য পরিবেশ তৈরি না হলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিপন্ন হতে পারে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “নামমাত্র সংস্কার কোনো সমাধান নয়। নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য আইনি ভিত্তি অপরিহার্য। এ ছাড়া, ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন বন্ধ করতে হবে।”
সমমনা দলগুলো নির্ধারিত করেছে চারটি মূল দাবি: জুলাই সনদের অবিলম্বে বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে পুনঃপ্রবেশ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন। আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি।
চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম বলেন, “২৪ জুলাইয়ে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য রক্ত ও জীবন উৎসর্গ করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি মৌলিক সংবিধানিক সংস্কার সম্পন্ন না হয়, আমরা জনতার স্বার্থে মাঠে ফিরব। এটি কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশের স্বার্থে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আতিফ রহমান বলেন, “এই যুগপৎ আন্দোলন বিএনপি এবং জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির চেষ্টা। তবে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে সাধারণ জনগণের সমর্থন ও সরকারের প্রতিক্রিয়ার উপর।”
সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক লায়লা আক্তার বলেন, “জুলাই সনদ এবং পিআর পদ্ধতি নিয়ে সমমনা দলগুলো রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রভাবিত হবে কিনা, তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হতে পারে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই আন্দোলনের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। দলটি শুধুমাত্র উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও যুগপৎ আন্দোলনের সম্পূর্ণ সমর্থন দেয়নি। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “আমরা কিছু দাবিতে সমর্থন জানাচ্ছি, কিন্তু পূর্ণ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়। আমরা যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত নেব।”
সমমনা দলগুলো পর্যায়ক্রমে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ রবিবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস তাদের কর্মসূচি প্রকাশ করবে। সোমবার ইসলামী আন্দোলন সংবাদ সম্মেলন করবে পুরানা পল্টনে। অন্যান্য দলও ধাপে ধাপে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই যুগপৎ আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারে। এটি শুধু বিএনপি-জামায়াত জোটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং জাতীয় পার্টি, সরকারের নীতি এবং নির্বাচন কমিশনের ওপরও চাপ তৈরি করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ