
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে একটানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সবগুলো বিভাগেই ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টি আরও এক সপ্তাহ চলতে পারে। ফলে অন্তত আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে ভোগান্তি ও দুর্ভোগ অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে ভারতের তেলেঙ্গানা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল পেরিয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা গণমাধ্যমকে জানান, “মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আগামী ১৯ তারিখ পর্যন্ত চলতে পারে। কোথাও কমবে আবার কোথাও বেড়ে যাবে। তবে সামগ্রিকভাবে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।” তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে, যা কিছুটা শীতল অনুভূতি দিলেও দুর্ভোগ বাড়াবে।
আজ রোববার সকাল ৯টার পূর্বাভাসে জানানো হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে অতি ভারি বর্ষণ বলা হয়। সর্বশেষ রেকর্ডে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাঙামাটিতে ৮৭, সন্দ্বীপে ৮০ এবং তেঁতুলিয়ায় ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে পাবনার ইশ্বরদীতে—৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে সিলেটে—২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভারি বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
রাজধানীতে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। বাতাস দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯০ শতাংশ। সূর্যাস্ত হয়েছে সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে, আর আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও রয়েছে। বৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যে রাজধানীর কিছু এলাকায় রাস্তা ও গলিতে পানি জমে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটছে।
টানা বৃষ্টিতে গ্রামীণ জনপদেও ভোগান্তি বেড়েছে। খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে এর প্রভাব পড়ছে সবচেয়ে বেশি। ভিজে যাওয়া রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক এলাকায় ধানক্ষেত ও শাকসবজির জমি পানির নিচে ডুবে গেছে। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি বা অকাল বন্যার পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।
সারাদেশে এই ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত কৃষির জন্য কিছুটা স্বস্তি আনলেও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বসাধারণকে সতর্ক থেকে পাহাড়ি এলাকায় অযথা অবস্থান না করার আহ্বান জানিয়েছে। একইসাথে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ