
ছবি: সংগৃহীত
প্রথমবার আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া শুধু একটি আর্থিক দায়িত্ব নয়, বরং নাগরিক কর্তব্যও বটে। তরুণ করদাতাদের কাছে এটি যেমন নতুন অভিজ্ঞতা, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রতিবছরই দেখা যায়, প্রথমবার কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু অনভিজ্ঞতার কারণে অনেকেই সঠিকভাবে রিটার্ন ফরম পূরণ করতে পারেন না। ফলে নানা ঝামেলায় পড়েন। তাই অভিজ্ঞ কর বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, নতুন করদাতাদের শুরুতেই সচেতন হতে হবে, সঠিক তথ্য দিতে হবে এবং কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বছরও অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ রেখেছে। এজন্য করদাতাদের ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত পুরো অর্থবছরের আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়বদ্ধতার তথ্য প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রয়োজনে সম্পদ বিবরণীও জমা দিতে হবে। এখন দেখা যাক, নতুন করদাতারা রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে কোন কোন বিষয়ে মনোযোগী হবেন—
১. সময়সীমা ভুলে যাবেন না
এ বছরও কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারিত আছে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে নতুন করদাতাদের জন্য সারা বছরই রিটার্ন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অনেকে সময়সীমা পার হয়ে গেলেও ভয়ে আর রিটার্ন দেন না। এটি ভুল। প্রথমবার কর রিটার্ন জমা দেওয়া শুরু করার জন্য অনলাইন ব্যবস্থাটি ব্যবহার করতে হবে।
২. সম্পদ লুকাবেন না
প্রথমবার রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় আপনার কাছে যে সম্পদ আছে, সবই সঠিকভাবে উল্লেখ করুন। জমি, ফ্ল্যাট, নগদ টাকা, ব্যাংক হিসাব, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রী—কোনো কিছু বাদ দেবেন না। মনে রাখবেন, এখন সম্পদ লুকালে ভবিষ্যতে তা সমস্যায় ফেলতে পারে।
৩. বিয়ের উপহার বাদ দেবেন না
বিয়েতে পাওয়া স্বর্ণালংকার, দামি উপহার—সবই আপনার সম্পদের অংশ। অনেকে এগুলো রিটার্নে দেখান না। কিন্তু নতুন করদাতাদের উচিত শুরুতেই এগুলো যুক্ত করা, যাতে ভবিষ্যতে হিসাবের মিল না থাকায় সমস্যা না হয়।
৪. প্রথমবারেই সব সম্পদ দেখান
প্রথম রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় হাতে যতটুকু সম্পদ আছে, সব দেখিয়ে ফেলুন। কারণ পরে হঠাৎ করে সম্পদ দেখাতে গেলে কর কর্মকর্তারা উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। এতে কর তদন্ত বা জরিমানার ঝুঁকি থাকে।
৫. কৌশলগতভাবে সম্পদ দেখান
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রথমবারই একটু বেশি সম্পদ দেখানো বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন আপনার কাছে ২০ ভরি স্বর্ণ থাকলেও ৫০ ভরি দেখালেন। এতে ভবিষ্যতে নতুন সম্পদ যোগ হলে সহজে মিলিয়ে নেওয়া যাবে। মনে রাখবেন, ৪ কোটি টাকার নিচে সম্পদের ওপর কোনো সম্পদ কর দিতে হয় না।
৬. খরচে কৃপণতা করুন
আয়ের সঙ্গে খরচের সামঞ্জস্য না থাকলে কর কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলতে পারেন। আপনার আয় যদি বছরে ১২ লাখ টাকা হয়, অথচ খরচ দেখালেন ১৫ লাখ টাকা, তাহলে জবাব দিতে হিমশিম খেতে হবে। তাই খরচ দেখাতে কৃপণ হোন, আয় ও খরচ যেন বাস্তবসম্মত হয়।
৭. বিলাসী খরচ দেখানো থেকে বিরত থাকুন
আপনার আয় সীমিত অথচ রিটার্নে দেখালেন বিদেশ ভ্রমণ, সন্তানদের ব্যয়বহুল স্কুলে পড়ানো বা নিয়মিত পাঁচ তারকা হোটেলে খাওয়ার খরচ—তাহলে কর কর্মকর্তাদের কাছে এটি সন্দেহজনক মনে হবে। তাই অযৌক্তিক বিলাসী খরচ দেখানো থেকে বিরত থাকুন।
৮. জীবনযাত্রার পরিবর্তন ধাপে ধাপে দেখান
জীবনযাত্রায় হঠাৎ পরিবর্তন দেখানোও ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন হঠাৎ করে বিলাসবহুল গাড়ি কেনা বা দামি বাড়ি কেনার তথ্য দিলে তা আয় ও সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। বরং ধাপে ধাপে পরিবর্তন দেখানোই নিরাপদ।
৯. প্রথমবার কর কর্মকর্তারা সহনশীল থাকেন
অভিজ্ঞরা বলেন, নতুন করদাতাদের প্রতি কর কর্মকর্তারা সাধারণত সদয় থাকেন। তারা খুব বেশি খুঁটিনাটি যাচাই করেন না। করদাতাদের ভবিষ্যতের জন্য উৎসাহিত করতে যা দেখানো হয়, তা মেনে নেওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই প্রথমবার নির্ভয়ে রিটার্ন জমা দিতে পারেন।
১০. সততার সঙ্গে রিটার্ন জমা দিন
সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সততা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রেখে রিটার্ন জমা দিন। মিথ্যা তথ্য বা সম্পদ লুকিয়ে রাখা থেকে বিরত থাকুন। সততার সঙ্গে রিটার্ন জমা দিলে ভবিষ্যতে কোনো আইনি জটিলতা বা তদন্তের ভয় থাকে না।
প্রথমবার আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া অনেকের কাছেই জটিল মনে হলেও আসলে এটি বেশ সহজ একটি প্রক্রিয়া, যদি নিয়ম মেনে ফরম পূরণ করা যায়। কর কর্মকর্তারা নতুনদের প্রতি সহনশীল হলেও সচেতন, কৌশলী এবং সৎ থেকে রিটার্ন জমা দিলে ভবিষ্যতে আর্থিক পরিকল্পনা ও আইনগত নিরাপত্তা দুটোই নিশ্চিত হবে। তাই নতুন করদাতাদের উচিত এখন থেকেই সঠিকভাবে কর রিটার্ন জমা দেওয়ার অভ্যাস তৈরি করা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ