
ছবি: সংগৃহীত
বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত ‘জুলাই সনদ’–এর প্রাথমিক খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীতে অনুষ্ঠিত কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৯তম বৈঠকে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে। এই খসড়াটি আগামীকালের (সোমবার, ২৮ জুলাই) মধ্যে দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হবে, যাতে তারা নিজেদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে মতামত দিতে পারেন। সেই মতামতগুলো বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে আমরা চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করব।”
তিনি আরও বলেন, “আপনাদের মতামত পাওয়ার পরে আমরা সেটিকে বিশ্লেষণ করব এবং চূড়ান্ত জুলাই সনদের পটভূমি, মূল বক্তব্য, বিভিন্ন দলের অঙ্গীকার এবং প্রক্রিয়াগত উপাদানসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ দলিল হিসেবে প্রকাশ করব।”
আলোচনার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কমিশন কিছু সীমারেখা নির্ধারণ করেছে। আলী রীয়াজ বলেন, “যদি কোনো রাজনৈতিক দল থেকে বড় ধরনের মৌলিক আপত্তির বিষয় উত্থাপিত না হয়, তাহলে কমিশন আর সেই বিষয় নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা করবে না।” অর্থাৎ, আলোচনার গতি রক্ষা করতেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মতামত প্রদানকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি সময়ের স্বল্পতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন, “আমাদের অবশ্যই আলোচনা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। আমরা এই আলোচনার প্রক্রিয়াটিকে সমাপ্ত করে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে চাই।”
আলী রীয়াজ তার বক্তব্যে আরও বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা মোট দশটি বিষয়ে একটি প্রাথমিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছি। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) রয়েছে, তারপরও এসব বিষয়ের মূল কাঠামোর ওপর মতৈক্য গড়ে উঠেছে।”
তিনি জানান, সাতটি বিষয়ে আলোচনা হলেও তা এখনও অসমাপ্ত রয়েছে এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আলোচনা সম্পন্ন করে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় দলিল উপস্থাপন সম্ভব হবে।
আজকের বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় আনা হয় তিনটি বিষয়: রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের প্রস্তাব এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব – পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দলগুলো হলো: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি সহ আরও অনেকে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন: বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নাগরিক সমাজ প্রতিনিধি সফর রাজ হোসেন, গবেষক ড. মো. আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়ে একটি সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এই সনদ তৈরি করা হচ্ছে। তাই দ্রুততার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সংগ্রহ, আলোচনা এবং প্রক্রিয়াগত সমাপ্তি নিশ্চিত করতে কমিশন নিরলসভাবে কাজ করছে।
এই সনদ তৈরি সম্পন্ন হলে তা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে নয়, দেশের জনগণের মধ্যেও একটি নতুন রাজনৈতিক সংলাপের দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন ও শাসন কাঠামো সংস্কার প্রক্রিয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ