
ছবি: সংগৃহীত
দেশের উপকূলীয় ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় আজ রোববার (২৭ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
রোববার ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, এই অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে উপকূল ও নিচু এলাকায় বসবাসকারীদের।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরের ওপর সক্রিয় মৌসুমি অক্ষ এবং নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় উপকূলীয় জেলাগুলোতে হঠাৎ ঝড়ো আবহাওয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক বেশি। এর ফলে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার পাশাপাশি বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
নদীবন্দরগুলোতে এক নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে, যার মানে হচ্ছে, ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ছোট নৌযান ও মাছ ধরার নৌকাগুলোর জন্য তা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম উপকূলে অবস্থানরত নৌযানগুলোকে তীরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, “আজ দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকবে। তবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টি কিছুটা কমলেও উপকূলীয় অঞ্চলে রাত পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।”
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং কোথাও কোথাও অতি ভারি বর্ষণও হতে পারে, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায়।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির যে ধারাবাহিকতা গত কয়েকদিন ধরে চলছে, তা সপ্তাহজুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে। এসময় ভূ-পৃষ্ঠে জলাবদ্ধতা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি এবং ক্ষুদ্রাকৃতির বন্যা দেখা দিতে পারে নিচু এলাকাগুলোতে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষি ও মৎস্য খাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট খাতগুলোকে আগেভাগেই প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে শাকসবজি চাষ, ধানের চারা রোপণ, পোল্ট্রি খামার এবং মাছের খামার যেসব নিচু এলাকায় অবস্থিত, সেখানে অতিরিক্ত পানি জমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “জুলাই-আগস্ট মাসে এমন ভারি বৃষ্টি হলে ধানের বীজতলা ও নতুন চারা তলিয়ে যেতে পারে। আমরা কৃষকদের অস্থায়ী বাঁধ, পানি নিষ্কাশন নালা খনন এবং বৃষ্টির সময় মাঠে না নামার পরামর্শ দিচ্ছি।”
এছাড়াও উপকূলীয় ও নিচু এলাকার বাসিন্দাদের ঝড়বৃষ্টির সময় ঘরের বাইরে না যেতে এবং শিশু ও বয়স্কদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। যারা নদীপথে যাতায়াত করেন, তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বলছে, “আমরা উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করছি। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ ঘাটে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশের আবহাওয়া গত কয়েকদিন ধরে অস্থির রূপ নিচ্ছে, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে। আজ দুপুরের মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ ও কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় স্থানীয়দের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সরকারি সংস্থাগুলোর পরামর্শ, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ সতর্কতা এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণই এখন প্রধান করণীয়। সপ্তাহজুড়ে চলমান এই বৃষ্টির ধারা পর্যবেক্ষণ করতে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সমন্বিত প্রস্তুতির ওপর জোর দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ