
ছবি: সংগৃহীত
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম একনেক সভায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে।
রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন থেকে ব্যয় করা হবে ৮ হাজার ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়া, বৈদেশিক ঋণ থেকে আসবে ১৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, এবং আবেদনকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় হবে ৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
একনেক সভায় যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, শিক্ষা, কৃষি, নারী ক্ষমতায়ন ও জ্বালানি খাতে আধুনিকায়ন। নিচে প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—
১. কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী সড়ক নির্মাণ প্রকল্প (২য় সংশোধিত, ৪র্থ বার বৃদ্ধি)
মন্ত্রণালয়: গৃহায়ন ও গণপূর্ত
বিবরণ: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণের জন্য অনুমোদন। এটি এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নে সহায়ক হবে।
২. ২০টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন
মন্ত্রণালয়: স্বরাষ্ট্র
বিবরণ: দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১২টি নতুন ও ৮টি পুরাতন স্টেশন পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে জরুরি সেবার সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
৩. বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য লজিস্টিকস ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা (২য় সংশোধিত)
উদ্দেশ্য: সমুদ্র নিরাপত্তা জোরদার করতে কোস্ট গার্ডের জন্য অত্যাধুনিক লজিস্টিক ও ফ্লিট মেইনটেন্যান্স সুবিধা তৈরি।
৪. গ্রামীণ স্যানিটেশন প্রকল্প
মন্ত্রণালয়: স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়
লক্ষ্য: পল্লী এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়ন।
৫. বহদ্দারহাট বাড়াইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন (৩য় সংশোধিত)
লক্ষ্য: পানি নিষ্কাশন উন্নয়ন এবং শহর এলাকায় জলাবদ্ধতা কমাতে এই প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।
৬. বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প
মন্ত্রণালয়: রেলপথ
লক্ষ্য: পুরোনো রেললাইন মেরামত, সিগনালিং ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন।
৭. মিরপুর সেনানিবাসে অফিসার্স মেস ও বিওকিউ নির্মাণ (১ম সংশোধিত)
মন্ত্রণালয়: প্রতিরক্ষা
লক্ষ্য: সেনাবাহিনীর বাসস্থান ও অফিস ব্যবস্থার উন্নয়ন।
৮. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প
মন্ত্রণালয়: শিক্ষা
বিবরণ: শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে অবকাঠামো সম্প্রসারণ, ল্যাব ও শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ।
৯. উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ (২য় পর্যায়)
মন্ত্রণালয়: মহিলা ও শিশু বিষয়ক
লক্ষ্য: নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন।
১০. বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত, ৪র্থ বার বৃদ্ধি)
মন্ত্রণালয়: সংস্কৃতি
লক্ষ্য: লোকজ সংস্কৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শনী ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং পর্যটন উন্নয়ন।
১১. কন্দাল ফসল গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প
মন্ত্রণালয়: কৃষি
লক্ষ্য: খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আলু, কচু, শালকচু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি কন্দাল ফসলে গবেষণা সম্প্রসারণ।
১২. স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্প (১ম সংশোধিত)
মন্ত্রণালয়: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ
বিবরণ: বিপিডিবির আওতায় বিদ্যুৎ বিতরণ জোনগুলোতে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা।
পরিকল্পনা কমিশনের একজন সিনিয়র সদস্য বলেন, “এই প্রকল্পগুলো শুধু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করবে না, বরং নাগরিক জীবনের মান উন্নয়ন, সেবা সহজীকরণ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, “প্রত্যেকটি প্রকল্প জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, সুশাসন, নিরাপত্তা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য আমরা সময়মতো পর্যবেক্ষণ চালাব।”
উল্লেখ্য, এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ১২তম একনেক সভা, যা নতুন অর্থবছরের প্রথম একনেক বৈঠক হিসেবেও চিহ্নিত হলো। ফলে এর মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন এজেন্ডার রূপরেখা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ