
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে বাংলাদেশ সরকার ২৫টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার কার্যাদেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
বাণিজ্য সচিব জানান, বোয়িং একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি কোম্পানি হলেও, এটি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক ও সামরিক উড়োজাহাজ নির্মাণের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান। সচিব বলেন, “বোয়িংয়ের ব্যবসাটা যুক্তরাষ্ট্র সরকার করে না। এটি সম্পূর্ণভাবে করে একটি প্রাইভেট কোম্পানি—বোয়িং। তবে এটি আমেরিকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।”
তিনি জানান, ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশও ১০০টির মতো বোয়িং উড়োজাহাজের অর্ডার দিয়েছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ একটি সীমিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার মাধ্যমে।
মাহবুবুর রহমান জানান, এত বড় অর্ডার একসঙ্গে সরবরাহ করা বোয়িংয়ের জন্য সহজ নয়। “এই কোম্পানি তাদের উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী উড়োজাহাজ সরবরাহ করে থাকে। সেজন্য এই ২৫টি উড়োজাহাজ পেতে আমাদের অনেক সময় লাগবে,” বলেন তিনি। এর মানে, এই উড়োজাহাজগুলো পরবর্তী কয়েক বছরে ধাপে ধাপে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে।
তিনি আরও বলেন, “বোয়িং-এর উড়োজাহাজে বিনিয়োগ করা মানে শুধু আকাশপথে যোগাযোগ সহজ করা নয়, বরং একটি দেশের কৌশলগত সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক রুটে প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা তৈরি করা।”
বর্তমানে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে বিভিন্ন মডেলের ১৪টি বোয়িং উড়োজাহাজ রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে:
৪টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ – প্রতিটি ১৬২ সিটের
৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর – প্রতিটি ৪১৯ সিটের
৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার
২টি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার
এই নতুন ২৫টি উড়োজাহাজ যুক্ত হলে বহর আরও শক্তিশালী হবে এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্য বাড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বোয়িং কিছু সময় ধরে বিভিন্ন মডেলের উড়োজাহাজে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে। ৭৩৭ ম্যাক্স সিরিজে একাধিক দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী তাদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তবে বোয়িং বলছে, তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মডেলেই ব্যাপক গবেষণা ও পর্যালোচনা চালায়।
বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো, যখন বিমানবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থায় অটোমেশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক সিস্টেম উন্নয়নে অটোমেশন প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতের বিমান চলাচলকে আরও নিরাপদ ও দক্ষ করে তুলবে।
বোয়িং উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়ার ফলে ঢাকা থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন রুটে নতুন ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, কবে থেকে এই ২৫টি উড়োজাহাজ ধাপে ধাপে দেশের বহরে যুক্ত হতে শুরু করবে। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ আকাশপথে যাত্রার এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ