
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজনীতিতে আলোচিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে ১২ দলীয় জোট। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তারা একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেতারা এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে মূলত চারটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আলোচনা হয়—
১. সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা,
২. নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা,
৩. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় করণীয় নির্ধারণ,
৪. সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা।
জোটের নেতারা মনে করেন, দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষায় জুলাই সনদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈঠকে উপস্থিত সব দলের প্রতিনিধিরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনিভিত্তি নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাদের মতে, এ সনদ শুধু একটি রাজনৈতিক ঘোষণা নয়, বরং সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত একটি প্রক্রিয়ায় রূপ নিতে হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা স্পষ্ট করে বলেন, জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার স্বার্থে প্রয়োজনে যেকোনো ছাড় দিতে তারা প্রস্তুত। সবাই একমত হন যে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
একইসঙ্গে বৈঠকে উঠে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব—জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই জুলাই সনদের বাস্তবায়নের বিষয়ে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রত্যক্ষ মতামত নেওয়া সম্ভব হবে বলে জোটের নেতারা মনে করেন।
বৈঠকে আরও প্রস্তাব করা হয়, সংবিধানের ১০৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাইতে পারেন। এভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতরেই শক্তিশালী করা যাবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, আমজনতার দলের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান, এনডিএমের মহাসচিব মোমিনুল আমিন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন, জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ এবং লেবার পার্টির সহসভাপতি এস এম ইউসুফ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১২ দলীয় জোটের এই অবস্থান আগামী নির্বাচনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে তারা যে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছে, তা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মধ্যেও নতুন আলোচনার জন্ম দেবে। একইসঙ্গে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবটি যদি কার্যকর হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ