
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন ইতোমধ্যেই সরগরম হয়ে উঠেছে। সরকারপক্ষ এবং বিরোধী দলগুলো নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি। দলটি এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কভাবে এগোচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রক্রিয়ায় দলের ভবিষ্যৎ অবস্থান এবং ভোটের মাঠে টিকে থাকার সক্ষমতা অনেকটাই নির্ভর করবে।
সম্প্রতি গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি ভার্চুয়ালি আলোচনায় যুক্ত হয়ে আসন্ন নির্বাচনে দলের প্রস্তুতি, প্রার্থী চূড়ান্তকরণ এবং মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে আগামী মাস অর্থাৎ অক্টোবরেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছে। একই সঙ্গে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে কোন কোন আসনে ছাড় দেওয়া হবে, তা নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগেই অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। অধিকাংশ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিএনপির হাইকমান্ড। আরেকটি অংশ এখনও খোলা রয়েছে, যেখানে মিত্র দলগুলোকে আসন ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রক্রিয়াটি কেবল দলীয় পর্যায়ের আলোচনা বা মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। প্রার্থী নির্বাচনে স্থানীয় জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক শক্তি, ত্যাগ ও আন্দোলনে ভূমিকা, সততা এবং ক্লিন ইমেজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বয়স ও নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
একাধিক জরিপ ইতোমধ্যেই বিএনপির হাইকমান্ডের হাতে পৌঁছেছে। দলীয় সাংগঠনিক টিমও প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। এই তালিকা নিয়ে সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন তারেক রহমান।
ধারণা করা হচ্ছে, জরিপের তথ্য এবং সাংগঠনিক টিমের সুপারিশ মিলিয়ে সমন্বিত একটি তালিকা তৈরি করে সেখান থেকেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত লবিংয়ের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করছে বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচিত অন্যতম বিষয় ছিল মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি। ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের সময় যেসব দল বিএনপির পাশে ছিল, তাদের জন্য আসন ছাড়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঠিক কতটি আসন ছাড় দেওয়া হবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সরাসরি মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, প্রায় ১৫০ আসনে প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা নেই। এসব আসনে প্রার্থীরা মোটামুটি নিশ্চিত। বাকি আসনগুলো নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা ও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরের দ্বন্দ্ব, প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও আন্দোলনকেন্দ্রিক ভূমিকা বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন তালিকায় বেশ কিছু ‘চমক’ থাকতে পারে। আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত, সততা ও ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এলাকায় জনপ্রিয় নতুন মুখদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। ফলে তরুণ প্রার্থীরা উল্লেখযোগ্য হারে মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি দলের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনের অংশ হতে পারে।
রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো—বিএনপি এবার কতটা কৌশলী হবে এবং একক প্রার্থী নির্ধারণে কী ধরনের সমঝোতা তৈরি করতে পারবে। কারণ অতীতের নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোট বিভক্ত হয়েছে, যা দলটির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়েছিল। এবার সেসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই বিএনপি আগাম প্রার্থী নির্ধারণে তৎপর।
সার্বিকভাবে বলা যায়, বিএনপি এখন একক প্রার্থী নির্ধারণের মাধ্যমে নিজেদের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা দৃঢ় করতে চাইছে। পাশাপাশি মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা করে শক্তিশালী জোটবদ্ধ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে নির্বাচনী মাঠে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত ও দৃঢ় অবস্থানে থাকবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ