
ছবি: সংগৃহীত
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ফাইনাল, যেখানে মুখোমুখি হবে দুই প্রতিবেশী এবং ক্রিকেটের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ভারত ও পাকিস্তান। দীর্ঘ এশিয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলছে এই দুই দেশ। উত্তেজনা, ভিড় এবং খেলার আবেদন পুরো মরুশহর দুবাইকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
ফাইনাল শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায়, যা শুধুমাত্র ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি উন্মাদনার উৎসব। টিকিটের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকরা সকাল থেকেই স্টেডিয়ামের চারপাশে ভিড় জমাচ্ছেন। মাঠে উপস্থিত থাকবেন বলিউড নায়ক-নায়িকারা, যার মাধ্যমে ম্যাচের গ্ল্যামারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এশিয়া কাপের ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালে শারজাহতে প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছিল না। এরপর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করছে। এবারের আসরে ভারতের রেকর্ড অত্যন্ত শক্তিশালী। সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে ভারত গ্রুপ পর্বে টানা ছয় জয়ে ফাইনালে পৌঁছেছে। এতে তারা দুইবার পাকিস্তানকে হারিয়েছে। ভারতের মোট ফাইনাল খেলার সংখ্যা এখন ১২, যার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৮ বার। পাকিস্তান ফাইনালে পৌঁছেছে এবার ছয়বার, যেখানে তারা ২০০০ ও ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের আবেদন যদিও সত্তর-আশির দশকের মতো চরম উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পারছে না, তবুও এর উত্তেজনা এখনও তীব্র। এর প্রধান কারণ দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব এবং তারকা ক্রিকেটারের কম উপস্থিতি। একসময় ভারতের জন্য মাঠ কাঁপিয়েছেন সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, আর পাকিস্তানের পক্ষে খেলেছেন ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম উল হক, সাঈদ আনোয়ার। এই তারকাদের সান্নিধ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব ম্যাচের আবেদন কমিয়েছে।
তবে ক্রিকেটের প্রশাসনিক সংস্থা এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) সবসময়ই ভারত-পাকিস্তান ফাইনালকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করে। এবারের আসরে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক বা না থাকুক, ইতিহাস গড়া ম্যাচ হওয়া নিশ্চিত।
ভারত-পাকিস্তান দুটি দল এশিয়া কাপের টি-২০ ফরম্যাটে ১৫টি ম্যাচ খেলেছে। ভারতের ১১ জয়, পাকিস্তানের ৩ জয় এবং ১টি ম্যাচ টাই। টি-২০ এশিয়া কাপের ইতিহাসে এই দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি ম্যাচে ভারতের জয় ৪ এবং পাকিস্তানের জয় ১। এ হিসেবে ভারতের পক্ষে আজকের ফাইনালে জয় পাওয়ার প্রত্যাশা প্রবল।
মাঠে এবং স্টেডিয়ামের বাইরে দুবাইতে উন্মাদনা দেখার মতো। খেলা শুরু হওয়ার আগেই গরম, ভিড়, আলোকসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম এবং ভক্তদের উল্লাস ম্যাচকে উত্তেজনায় ভরিয়ে দিয়েছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ম্যাচ শুধু দুই দলের জন্য নয়, পুরো মহাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
ফাইনাল খেলা শুরু হলে ভারত-পাকিস্তান উভয় দলের খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটা দেখানোর চেষ্টা করবেন। ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব এবং পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমের নেতৃত্বে তাদের দলের শক্তি, কৌশল এবং মানসিকতা প্রমাণ করতে মাঠে নামবেন। উভয় দলের বোলিং এবং ব্যাটিং সান্নিধ্য ফাইনালকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করবে।
মাঠে ভিড়ের পাশাপাশি টেলিভিশন ও অনলাইন স্ট্রিমিং মারফত কোটি কোটি দর্শক ম্যাচ উপভোগ করবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও হ্যাশট্যাগ #INDvPAK #AsiaCup2025Final ট্রেন্ড করছে, যেখানে সমর্থকরা নিজের মতামত, উল্লাস এবং আশা-নিরাশার গল্প শেয়ার করছেন।
এভাবে, আজকের ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল শুধুমাত্র ক্রিকেটের এক ম্যাচ নয়, এটি মহাদেশীয় উত্তেজনা, ইতিহাস, ক্রীড়া এবং সমর্থক উন্মাদনার মিলনক্ষেত্র। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আজ সেই স্বপ্নের মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ