
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নিরপরাধ বেসামরিক মানুষদের ওপর চলমান হামলায় গত এক দিনে আরও ৯১ জন নিহত হয়েছেন। আলজাজিরা অ্যারাবিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৪৮ জন গাজা সিটির বাসিন্দা, যার মধ্যে ছয়জন ত্রাণ নেওয়ার সময় নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার সারায়া এলাকায় বেসামরিক এলাকায় বোমা বর্ষণ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হুমকি দিয়েছেন, গাজায় তাদের লক্ষ্য সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত হামলা বন্ধ হবে না। এ ছাড়া, তিনি বর্বরতা আরও বাড়ানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রতি দিন প্রায় ১০০ জনের মৃত্যুর এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা এখন মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮ মুসলিম দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও পুনর্গঠন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। বৈঠক শেষে মুসলিম নেতারা বলেছিলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত ২১ দফার বিস্তারিত তখন জানা যায়নি।
গতকাল ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল দফাগুলোর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ করেছে।
প্রস্তাবিত ২১ দফার মূল বিষয়বস্তু হলো:
১. গাজা হবে চরমপন্থা-মুক্ত ও সন্ত্রাস-মুক্ত অঞ্চল, যা প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে না।
২. গাজার পুনর্গঠন করা হবে, যাতে মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত হয়।
৩. উভয় পক্ষ সম্মত হলে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং ইসরায়েল ধীরে ধীরে গাজা থেকে সরে যাবে।
৪. চুক্তি ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল জিম্মি ফিরিয়ে দেওয়া হবে, মৃত ও জীবিত।
৫. জিম্মি মুক্তির পর ইসরায়েল কয়েকশো ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দেবে, পাশাপাশি আটক মৃতদেহ হস্তান্তর করবে।
৬. হামাস যোদ্ধাদের জন্য ক্ষমা ও নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করা হবে।
৭. ত্রাণ সাহায্য বাড়ানো হবে—প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে।
৮. জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
৯. গাজার শাসনভার অস্থায়ী ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কমিটির হাতে থাকবে।
১০. আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আধুনিক শহর এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গঠন করা হবে।
১১. গাজায় কম শুল্ক ও সহজ প্রবেশাধিকারের অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
১২. কেউ গাজা ছাড়তে বাধ্য হবে না, চাইলে ফিরে আসার সুযোগ থাকবে।
১৩. হামাসের কোনো সামরিক ভূমিকা থাকবে না, অবকাঠামো ধ্বংস করতে হবে।
১৪. আঞ্চলিক অংশীদারদের মাধ্যমে নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিশ্চিত করা হবে।
১৫. আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে অস্থায়ী বাহিনী গঠন করা হবে।
১৬. ইসরায়েল গাজা দখল করবে না, নতুন নিরাপত্তা বাহিনী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
১৭. হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে নির্দিষ্ট দফা প্রয়োগ করা হবে।
১৮. ভবিষ্যতে ইসরায়েল কাতারে হামলা করবে না।
১৯. গাজার জনগোষ্ঠীকে চরমপন্থা থেকে দূরে সরানো হবে, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ হবে।
২০. গাজার পুনর্গঠন শেষ হলে ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়ার পথ সুগম হবে।
২১. যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আলোচনার জন্য মধ্যস্থতা করবে।
আগামী সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠকে জানা যাবে, ইসরায়েল এই চুক্তি মানবে কি না। ইতোমধ্যে নেতানিয়াহু জাতিসংঘে ভাষণ দিয়ে বলেছেন, হামলা অব্যাহত রাখবেন। অন্যদিকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তারা হয়ত যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, গাজায় মানবিক বিপর্যয়, অবকাঠামো ধ্বংস এবং অসহায় বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু এ সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। ২১ দফার প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে, গাজার পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, গাজায় জীবন ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং চাপের বিষয় হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
সূত্র: আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল
বাংলাবার্তা/এমএইচ