
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরাইল এখন ক্রমশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া ও বন্দিমুক্তি আলোচনাকে ইচ্ছে করেই ভণ্ডুল করছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার ভাষণ ঘিরে ঘটে যাওয়া নাটকীয় ঘটনাকেই হামাস এই বিচ্ছিন্নতার বড় প্রমাণ হিসেবে সামনে এনেছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দিতে উঠেছিলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তবে তার বক্তব্য শুরু হতেই অনেক দেশের প্রতিনিধি প্রতিবাদস্বরূপ অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। গাজায় গণহত্যা, দমননীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিশ্ব কূটনীতিকদের এই ওয়াকআউট বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। হামাসের মতে, এ ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে ইসরাইল কতটা একঘরে হয়ে পড়েছে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধানের মিডিয়া উপদেষ্টা তাহের আল-নুনু এক বিবৃতিতে বলেন, “জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণ বয়কট করা বিশ্ব থেকে ইসরাইলের বিচ্ছিন্নতারই একটি প্রকাশ।”
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর আরেক সদস্য ইজ্জত আল-রিশক বলেন, “নেতানিয়াহুকে ঘিরে এখন কেবল কিছু চিয়ারলিডার বাকি আছে, যারা জাতিসংঘে ঢুকে গণহত্যার পক্ষেই হাততালি দিয়েছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী আবারও ‘গণহত্যা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও পরিকল্পিতভাবে অনাহারে রাখার মতো অপরাধ’ অস্বীকার করেছেন।
হামাস নেতা ইজ্জতের দাবি, নেতানিয়াহু শান্তির নামে বারবার প্রতারণা করছেন। বাস্তবে গাজায় প্রতিদিনই ইসরাইলি সেনারা নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষ হত্যা করছে। এ অবস্থায় তার অবস্থানই যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রধান অন্তরায়।
নেতানিয়াহুর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন গাজার সাধারণ মানুষ। যুদ্ধ বন্ধের কোনো ইঙ্গিত না পাওয়ায় তারা গভীরভাবে মুষড়ে পড়েছেন। গাজার বহু পরিবার যুদ্ধবিরতির আশায় দিন গুনলেও জাতিসংঘের মঞ্চে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে শান্তির কোনো বার্তা না থাকায় তাদের আশা ভঙ্গ হয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও নেতানিয়াহুর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি একে সরাসরি “যুদ্ধাপরাধীর ভাষণ” আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদী সুরে বলেছেন, গাজা যুদ্ধ নিয়ে সমঝোতা শিগগিরই বাস্তবে রূপ নেবে। তার ভাষায়, “গাজা যুদ্ধ এখন শান্তির দ্বারপ্রান্তে।” তিনি দাবি করেছেন, শান্তি চুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ইতোমধ্যে হয়েছে এবং খুব দ্রুতই তা বাস্তবায়িত হবে।
তবে ইসরাইলি কর্মকর্তারা এখনও পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ পরাস্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না। তাদের মতে, এই লড়াই অস্তিত্বের, তাই আপসের কোনো সুযোগ নেই।
একদিকে হামাস ইসরাইলের কূটনৈতিক একঘরে হওয়ার চিত্র সামনে আনছে, অন্যদিকে মার্কিন প্রশাসন শান্তির দ্বারপ্রান্তের কথা বলছে। তবে ইসরাইলি নেতৃত্বের কঠোর অবস্থানকে কেন্দ্র করে গাজা প্রশ্নে সমীকরণ আরও জটিল হয়ে উঠছে। জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণকে কেন্দ্র করে বিশ্ব যে বিভক্ত, তা স্পষ্ট হয়েছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা মনে করছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইসরাইলকে ক্রমে কোণঠাসা করাই তাদের বড় রাজনৈতিক সাফল্য। তবে যুদ্ধবিরতি বাস্তবে কবে আসবে, গাজার মানুষ কবে শান্তি পাবে—এ প্রশ্ন এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ