
ছবি: সংগৃহীত
খাগড়াছড়িতে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। ভোর ৫টা থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধের ফলে জেলার ভেতরে ও বাইরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অবরোধের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে খাগড়াছড়িতে প্রবেশ করা শতাধিক যানবাহন সড়কে আটকে আছে। বিপাকে পড়েছেন যাত্রীদের পাশাপাশি হাজার হাজার পর্যটক। বিশেষ করে সাজেক ভ্যালির মতো জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগামী শতাধিক মানুষ আটকে পড়েছেন। পর্যটনকেন্দ্রের প্রবেশমুখে ও খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে শহরের ভেতরে সীমিত পরিসরে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলতে দেখা গেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাজেক সড়কে আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
অবরোধকারীরা খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং ইট রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। সকাল থেকেই মহালছড়ি, পানছড়ি, চেঙ্গী সেতু, ভাইবোনছড়া, গাছবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ সমর্থকরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
অবরোধ চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামগামী একটি অ্যাম্বুলেন্সে হামলার ঘটনা ঘটে। আলুটিলা এলাকায় অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন যুবক অ্যাম্বুলেন্সটির সামনে ও পেছনের কাচ ভাঙচুর করে। সৌভাগ্যবশত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, “বিভিন্ন পয়েন্টে পোড়া টায়ার ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ তৈরি করা হয়েছে। তবে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরাও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে।”
অবস্থার অবনতি এড়াতে জেলা প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ফলে সমাবেশ, মিছিল বা জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার পথে নবম শ্রেণির এক মারমা কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। রাত ১১টার দিকে স্থানীয়রা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। ঘটনার পর পুলিশ এক যুবককে গ্রেপ্তার করে এবং আদালতের অনুমোদনে তাকে ছয় দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণ এবং বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভে নামেন। বুধবার থেকে টানা বিক্ষোভ চলতে থাকে। বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস অবরোধ পালনের পর শুক্রবারের সমাবেশ থেকে শনিবারের সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
খাগড়াছড়িতে পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ। প্রশাসন আশঙ্কা করছে, অবরোধ দীর্ঘায়িত হলে পরিবহন খাতের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। স্থানীয়রা বলছেন, অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ