
ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বের চতুর্থ দিনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় চলমান সংঘাতের পটভূমিতে জাতিসংঘে বক্তব্য দেন। তার ভাষণে তিনি দাবি করেন, বিশ্বের অনেক নেতা প্রকাশ্যে ইসরাইলের সমালোচনা করলেও, গোপনে তাঁরা ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। নেতানিয়াহু বলেন, “আপনারা জানেন, ইসরাইল আপনাদের হয়ে লড়াই করছে। অনেক বিশ্বনেতা যারা প্রকাশ্যে আমাদের সমালোচনা করেন, তারা গোপনে আমাদের ধন্যবাদ জানান। আমাদের গোয়েন্দা সেবা অনেক দেশে হামলা রুখেছে, অসংখ্য প্রাণ বাঁচিয়েছে।”
জাতিসংঘের অধিবেশন কক্ষটি নেতানিয়াহুর ভাষণ শুরু হতেই খালি হয়ে যায়। বহু দেশের প্রতিনিধি—including আফ্রিকা, ইউরোপ ও আরব ও মুসলিম দেশের কূটনীতিকরা—উপস্থিতি ত্যাগ করে ওয়াকআউট করেন। কক্ষের কয়েকজন উপস্থিত কেবল তার সমর্থকরা, যারা জোরে জোরে হাততালি দেয়। এদের মধ্যে ছিলেন নেতানিয়াহুর স্ত্রী ও নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস।
নেতানিয়াহু তার বক্তব্যের শুরুতেই গাজার অন্ধকূপে আটকে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “আমাদের প্রিয় জিম্মিদের পরিবারের জন্য ইসরাইল লড়াই করছে।” তবে সমালোচকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে নেতানিয়াহুর অনিচ্ছার কারণে বন্দিদের মুক্তি আটকে আছে।
এছাড়া তিনি একটি মানচিত্র দেখিয়ে বলেন, “ইরান সন্ত্রাসের অক্ষশক্তি।” তার ভাষণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন হামলা ও গুপ্তহত্যার মিশনের গর্ব প্রকাশ পায়। লেবাননে নির্বিচারে পেজার বিস্ফোরণ চালানো, হিজবুল্লাহ ও হুতি নেতাদের হত্যার দিকেও ইঙ্গিত দেন তিনি। এছাড়া সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের পতনের কৃতিত্বও নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেন, যদিও বিদ্রোহীদের কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেননি।
নেতানিয়াহুর ভাষণকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সমালোচনা চললেও তিনি জানান, “যেসব বিশ্বনেতা প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন, তারা গোপনে আমাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তারা আমাদের অসাধারণ গোয়েন্দা সেবাকে গুরুত্ব দেন যা অনেক সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করেছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেতানিয়াহুর বক্তব্য ও ওয়াকআউটের ঘটনা আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও মধ্যপ্রাচ্য সংকটের প্রতিফলন। অনেক দেশ সম্প্রতি ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও ইসরায়েল তার নিজস্ব নিরাপত্তার কথা সামনে রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজার পরিস্থিতি ও ইসরায়েলি অভিযানের মধ্যে মানবিক সংকট তীব্র। শিশু, মহিলা ও বেসামরিক নাগরিকের জীবন বিপন্ন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার হিউম্যানিটারিয়ান করিডোর খোলার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করান, নেতানিয়াহুর বক্তৃতা শুধুমাত্র সামরিক বা রাজনৈতিক কৌশল নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি বার্তা এবং ইসরায়েলকে সমর্থন ও সমালোচনার মধ্যে এক সংকটপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরছে। বিশ্ব নেতাদের গোপন ও প্রকাশ্য দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হওয়ায় এই দ্বন্দ্ব আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ