
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকায় দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থামাতে এবার সরাসরি উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম কান নিউজ এ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং তার জামাতা ও ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার। বৈঠকে তারা নেতানিয়াহুকে সাফ জানিয়ে দেন— “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতে, যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।”
এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে নির্ধারিত বৈঠকের আগে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রাথমিক ঐকমত্য তৈরি করা।
কান নিউজ জানায়, নেতানিয়াহুর নতুন যুদ্ধ পরিকল্পনায় যেসব পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রশাসন, তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়। মার্কিন দূতরা ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তা শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।
ট্রাম্প নিজেও তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল–এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “চার দিন ধরে নিবিড় আলোচনা চলছে এবং হামাসও এ বিষয়ে অবগত।”
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা দৈনিক জেরুজালেম পোস্ট–কে জানান, চলমান আলোচনায় যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রয়েছে, তা কার্যকর হলে যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে— “যে কোনো চুক্তিতে হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। ইসরায়েল এই ব্যাপারে কোনো আপস করবে না।”
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আলোচনাধীন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে—
-
সকল জিম্মিদের দ্রুত মুক্তি,
-
স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা,
-
ধাপে ধাপে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার,
-
হামাস শাসনের অবসান,
-
গাজা ছাড়তে বাধ্য হওয়া সিনিয়র হামাস নেতাদের জন্য সম্ভাব্য সাধারণ ক্ষমা,
-
গাজাকে বেসামরিকীকরণ,
-
একটি আরব নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন,
-
বেসামরিক শাসনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সীমিত অংশগ্রহণ,
-
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টি যে, ইসরায়েল পশ্চিম তীরের অঞ্চল দখল করবে না,
-
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথভাবে একটি পুনর্গঠন তহবিল গঠন।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা যুদ্ধের অবসান চাইলেও তার উদ্যোগ কেবল মানবিক কারণে নয়, বরং এটি বহুমুখী কূটনৈতিক কৌশলের অংশ। মার্কিন নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার নেতৃত্বের ভাবমূর্তি জোরদার করতে চান। একইসঙ্গে সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে পাশে রেখে একটি আঞ্চলিক ঐক্য গড়ে তুলতে চান, যা দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংকট সমাধানের ভিত্তি হতে পারে।
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর সরকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে থাকায় তিনি খুব সহজে যুদ্ধবিরতিতে যেতে চাইছেন না। ইসরায়েলি রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস না করলে গাজায় স্থায়ী শান্তি আসবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, অব্যাহত যুদ্ধ ইসরায়েলকে কৌশলগতভাবে দুর্বল করে দিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মহলে তাদের অবস্থান আরও জটিল করে তুলতে পারে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগামী সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বৈঠক হবে এই পুরো প্রক্রিয়ার মোড় ঘোরানোর সম্ভাব্য মুহূর্ত। সেখানে যদি উভয় পক্ষ কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়, তবে বহু প্রতীক্ষিত গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বার উন্মোচিত হতে পারে। তবে ইসরায়েলের শর্ত— হামাসের সম্পূর্ণ ধ্বংস— যদি অটল থাকে, তাহলে চুক্তি বাস্তবায়ন সহজ হবে না বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, জেরুজালেম পোস্ট, কান নিউজ
বাংলাবার্তা/এমএইচ