
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মঙ্গলবার একটি তীব্র ভাষণ দেন, যেখানে তিনি গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ৮৯ বছর বয়সী আব্বাস ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ভাষণ দেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা না দেওয়ায় তিনি নিজে সরাসরি নিউইয়র্কে উপস্থিত হতে পারেননি। তাঁর বক্তব্যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে “ক্ষুধাকে অস্ত্র” হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
আব্বাস বলেন, “প্রায় দুই বছর ধরে গাজার আমাদের জনগণ গণহত্যা, ধ্বংস, ক্ষুধা ও বাস্তুচ্যুতির মুখোমুখি।” তিনি উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনের কারণে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে। আব্বাসের ভাষ্যে, গাজায় ইসরায়েলি “গণহত্যামূলক যুদ্ধ” চালাচ্ছে, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইন উভয়ই লঙ্ঘন করছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৪১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৬০ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জনকে গাজায় বন্দি আনা হয়। আব্বাস স্পষ্টভাবে এই হামলাকে সমালোচনা করেন এবং বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণকে লক্ষ্য করে এমন বেসামরিক হত্যাকাণ্ড ও অপহরণ স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের অংশ নয়।” তিনি আরও জোর দেন, হামাসকে রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গত দুই বছরে গাজায় বেসামরিক জীবন পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করেছে। স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মসজিদ, কবরস্থান ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কূপ, পয়ঃনিষ্কাশন এবং পানি শোধনাগারও ধ্বংস করা হয়েছে। অন্য একটি জাতিসংঘ তদন্তে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে “গণহত্যা” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শুধু বুধবারেই গাজায় অন্তত ৮৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আব্বাসের ভাষণে যুদ্ধকে ইতিহাসে মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আব্বাস আরও বলেন, “চরমপন্থি ইসরায়েলি সরকার পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের মাধ্যমে দখলদারিত্ব বাড়াচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ রুদ্ধ করবে।” তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু’র ঘোষণা—‘কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না’—কে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার প্রকাশ্য লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন।
আব্বাস জানান, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা দখল, হত্যা, গ্রেপ্তার, বসতি স্থাপন এবং জমি-সম্পদ লুটপাটের শিকার হয়ে আসছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি, বন্দি বিনিময় এবং গাজার জনগণকে তাদের ভূমিতে টিকে থাকার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানান।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের মূল বার্তা হলো:
-
গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ মানবতাবিরোধী ও গণহত্যামূলক।
-
অবৈধ বসতি স্থাপন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করছে।
-
হামাসের সহিংসতা স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায়সঙ্গত নয়।
-
যুদ্ধের অবসান, বন্দি মুক্তি এবং নিরাপদ ভূমি প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে।
আব্বাসের ভাষণে স্পষ্ট করা হয়, “যত রক্তই ঝরুক, যত কষ্টই হোক, আমাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছা কখনো শেষ হবে না।” তিনি জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান, ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও মানবিক নিরাপত্তা রক্ষা করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
বাংলাবার্তা/এমএইচ