
ছবি: সংগৃহীত
দেশের সংগীত ও নাটকের অঙ্গনে দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে জনপ্রিয় নাম তাহসান খান। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ধীরে ধীরে নাটক ও চলচ্চিত্রেও সমান সাফল্য পেয়েছেন তিনি। তার গান যেমন ভক্তদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করেছে, তেমনি অভিনয়েও তৈরি করেছেন আলাদা ভুবন। তবে ব্যক্তিজীবনের উত্থান-পতনও তাকে সবসময় আলোচনায় রেখেছে।
২০০৬ সালে তাহসান বিয়ে করেন অভিনেত্রী ও শিক্ষাবিদ রাফিয়াদ রশীদ মিথিলাকে। দীর্ঘদিন প্রেমের পর তাদের সংসার গড়ে ওঠে, আর সেই সংসারে আসে কন্যাসন্তান আয়রা। কিন্তু ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর ২০১৭ সালে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন এই তারকা দম্পতি। তাদের ভক্তরা তখন ভীষণভাবে হতাশ হয়েছিলেন। বিচ্ছেদের পর মেয়ে আয়রাকে নিয়ে মিথিলা আলাদা হয়ে যান, আর তাহসান থেকেছেন একা।
বিচ্ছেদের পর একসময় একাকী জীবন কাটালেও ২০১৯ সালে কলকাতার আলোচিত নির্মাতা সৃজিত মুখার্জিকে বিয়ে করেন মিথিলা। বিয়ের পর সংসার গড়ে তোলেন কলকাতায়। মেয়ে আয়রাকেও নিয়ে যান সঙ্গে। তবে সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, সৃজিত-মিথিলার সংসারে অশান্তি দেখা দিয়েছে। এমনকি মিথিলা নাকি কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় ফিরে এসেছেন এবং মেয়েকে ঢাকার একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। এসব ইঙ্গিত দিচ্ছে তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েনের।
অন্যদিকে তাহসান দীর্ঘদিন অবিবাহিত থাকার পর চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিউটিশিয়ান রোজাকে বিয়ে করেছেন। তবে গোপনে অনুষ্ঠিত এই বিয়ে নিয়ে প্রথমে বেশি কিছু জানাতে চাননি তিনি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও ঘনিষ্ঠ সূত্রে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অনেকেই মনে করেন, তাহসানের জীবনে এটাই নতুন সূচনা।
শুধু ব্যক্তিজীবন নয়, পেশাগত জীবনেও বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন তাহসান। গত বছর অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এরপরও গানে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু চলতি সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ায় এক কনসার্টে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন—এটাই তার জীবনের শেষ কনসার্ট। অর্থাৎ সংগীত জীবনেরও ইতি টানতে যাচ্ছেন তিনি। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন—তিনি এখন মেয়ের বড় হওয়ার সময়কে প্রাধান্য দিতে চান। ভক্তরা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়েছেন তার এমন সিদ্ধান্তে।
তাহসানের গান ছাড়ার সিদ্ধান্ত যখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, তখনই নতুন করে আলোচনায় আসেন মিথিলা। তিনি প্রকাশ্যে জানান, সাবেক স্বামীর দ্বিতীয়বার বিয়ের সিদ্ধান্তকেও তিনি স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এতদিন পর কেন এমন কথা বললেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। অনেকে বলছেন, মিথিলা হয়তো দাম্পত্য জীবনে সমস্যার কারণে পুরোনো স্মৃতির দিকে ফিরে তাকাচ্ছেন। গুঞ্জন আরও রয়েছে—সৃজিত হয়তো তার জীবনে অতীত হয়ে যেতে চলেছেন, আর তাই মনের কোণে আবারও জেগে উঠছে তাহসানের প্রতি টান।
যদিও এসবই এখন পর্যন্ত কেবল গুঞ্জন। কারণ মিথিলা এখনও প্রকাশ্যে সৃজিতের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার কথা বলেননি। তবে মেয়ে আয়রাকে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা, এবং তাহসান প্রসঙ্গে ইতিবাচক মন্তব্য—এসব মিলিয়ে জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে।
গুঞ্জন ছাড়াও মিথিলা সম্প্রতি বড় সাফল্য অর্জন করেছেন। দীর্ঘ গবেষণার পর তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। নতুন পরিচয়ে সম্প্রতি টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হচ্ছেন তিনি। মাছরাঙা টিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান বিহাইন্ড দ্য ফেইম উইথ আরআরকে-এর নবম পর্বে অতিথি হয়ে হাজির থাকবেন আজ রাত ৯টায়। এই পর্বে তিনি তার গবেষণা, অভিনয়জীবন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলবেন।
শুধু অভিনয় নয়, নারী ও শিশু অধিকার নিয়েও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মিথিলা। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এ খাতে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাগত দায়িত্ব একইসঙ্গে সামলাচ্ছেন তিনি।
তাহসান ও মিথিলা—দুজনই এখন ভিন্ন ভিন্ন জীবনে ব্যস্ত। একজন ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিজীবনে নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন, আরেকজন ব্যক্তিগত ও পেশাগত টানাপোড়েনের মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের নাম এখনও আলোচনায় একসঙ্গে উঠে আসে। ফলে ভক্তদের আগ্রহও শেষ হয় না। সময়ই বলে দেবে, এ সম্পর্কের গল্প আবার নতুন মোড় নেবে নাকি থেকে যাবে অতীতের স্মৃতিতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ