
ছবি: সংগৃহীত
বাংলা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। কলকাতার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা, মণ্ডপ নির্মাণ আর প্রতিমা গড়ার কাজ। শুধু ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক দিক দিয়েই নয়, এই উৎসবকে ঘিরে তৈরি হয় বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেরও। আলো, সাউন্ড, প্যান্ডেল সাজানো থেকে শুরু করে খাবারের দোকান, সবখানেই জমে ওঠে ব্যবসা। আর এই আয়োজনে বড় একটি অংশ জুড়ে থাকে তারকাদের উপস্থিতি। বিশেষ করে পূজা উদ্বোধনে নামী তারকাদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিযোগিতা চলে ক্লাবগুলোতে। কার মণ্ডপে কোন তারকা এলেন, কে উদ্বোধন করলেন—এগুলো নিয়ে এক ধরনের সামাজিক প্রতিযোগিতা তৈরি হয় প্রতিবছরই।
প্রতিটি পাড়া, প্রতিটি ক্লাব চেষ্টা করে নিজেদের পূজাকে বিশেষভাবে আলোকিত করতে। তারকার উপস্থিতি মানেই মণ্ডপে দর্শনার্থীর ভিড় বেড়ে যাওয়া, মিডিয়ায় প্রচার পাওয়া এবং ক্লাবের মর্যাদা বাড়ানো। তাই কলকাতার বড় ক্লাবগুলো থেকে ছোট ক্লাব পর্যন্ত সকলেই বাজেট অনুযায়ী সিনেমা বা টিভি তারকাদের আমন্ত্রণ জানান। দর্শকদের প্রিয় নায়ক-নায়িকাদের সরাসরি এক ঝলক দেখার জন্য মণ্ডপে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। ফলে তারকারা হয়ে ওঠেন পূজা উদ্বোধনের অন্যতম আকর্ষণ।
যত নামী তারকা, তত বেশি পারিশ্রমিক—এই নিয়ম এখন অনেকটাই স্থায়ী হয়ে গেছে। কারও পারিশ্রমিক হাজারের ঘরে, আবার কারও ক্ষেত্রে তা লাখের ঘরে। সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে পূজা উদ্বোধনে আসেন টলি কুইন কোয়েল মল্লিক। তিনি একেকটি উদ্বোধনের জন্য নেন বাংলাদেশি টাকায় প্রায় পৌনে ৭ লাখ। এই অঙ্কটিই সর্বোচ্চ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও দেব। তারা দুজনেই পূজা উদ্বোধনের জন্য চার্জ করেন প্রায় সোয়া ৪ লাখ টাকা।
জনপ্রিয় নায়িকা মিমি চক্রবর্তী নেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় এবং দেবের মতো তিনিও সোয়া ৪ লাখ টাকার আশপাশে পারিশ্রমিক নেন। শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের পারিশ্রমিক পৌনে ৩ লাখ টাকার মতো, আর অঙ্কুশ হাজরাও প্রায় একই অঙ্কের পারিশ্রমিক নেন। সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও যশ দাশগুপ্ত পূজা উদ্বোধন করে থাকেন গড়ে ২ লাখ টাকায়। অর্থাৎ, বড় পর্দার তারকাদের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিকের অঙ্ক সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ৭ লাখ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে।
শুধু বড় পর্দার তারকারাই নন, ছোট পর্দার পরিচিত মুখরাও পূজা উদ্বোধনে দারুণ জনপ্রিয়। টেলিভিশন ধারাবাহিকের অভিনেতাদের ভক্তকুলও বিপুল। যেসব ধারাবাহিক বেশি জনপ্রিয় বা টিআরপি রেটিংয়ে শীর্ষে, সেই ধারাবাহিকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিকও তুলনামূলক বেশি। অনেক সময় ছোট পর্দার একাধিক তারকাকে একসঙ্গে নিয়ে আসে কোনো একটি ক্লাব।
‘জগদ্ধাত্রী’ ধারাবাহিকের নায়িকা অঙ্কিতা মল্লিক পূজা উদ্বোধনের জন্য নেন প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। ‘কথা’ ধারাবাহিকের অভিনেত্রী সুস্মিতা দে নেন প্রায় ৬০ হাজার। অন্যদিকে জনপ্রিয় অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য নেন ১ লাখ টাকা। ‘রাণী ভবানী’ চরিত্রে অভিনয় করা রাজনন্দিনী দত্তও নেন প্রায় ১ লাখ টাকা। সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত জুটি দিতিপ্রিয়া রায় ও জিতু কামাল নেন সোয়া এক লাখ টাকার কাছাকাছি। শুভস্মিতা মুখোপাধ্যায় নেন ৬০ হাজার, স্বস্তিকা দত্ত নেন ৭০ হাজার, পল্লবী শর্মার পারিশ্রমিকও একই অঙ্কের কাছাকাছি।
পূজা উদ্বোধনের জন্য তারকাদের সময় ম্যানেজ করাটা সহজ নয়। অনেক সময় তিন মাস আগে থেকেই ক্লাবগুলো তারকাদের বুকিং দিয়ে দেয়। একাধিক উদ্বোধনে অংশ নেন তারকারা। ফলে একই দিনে একজন তারকাকে একাধিক জায়গায় দেখা যায়। তাদের পারিশ্রমিকের সঙ্গে যুক্ত হয় যাতায়াত খরচ এবং স্থান ভেদে অতিরিক্ত চার্জও। শহরের কেন্দ্র থেকে দূরের ক্লাবগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত পারিশ্রমিক কিছুটা বেশি ধরা হয়।
পূজা মানেই আনন্দ, আর সেই আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় প্রিয় তারকাদের উপস্থিতি। তারকারা যেমন উপার্জনের নতুন সুযোগ পান, তেমনি ক্লাবগুলোও তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে সক্ষম হয়। আর দর্শকদের জন্য এটি এক অন্যরকম আনন্দ—নিজেদের প্রিয় নায়ক-নায়িকাকে কাছ থেকে দেখা। ফলে পূজা উদ্বোধন এখন শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।
বড় হোক বা ছোট, প্রত্যেক ক্লাবই চেষ্টা করে তারকাদের উপস্থিতিতে নিজেদের আয়োজনকে আরও উজ্জ্বল করে তুলতে। তাই বলা যায়, পূজা উদ্বোধনের অর্থনীতি এখন আর শুধু পূজার সঙ্গে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা বিনোদন জগতের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িয়ে গেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ