
ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে। শহরের ফতুল্লা স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় একটি ময়লার ভাগাড় থেকে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পোলিং অফিসারের পরিচয়পত্র ও সিল উদ্ধার করেছে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে এই অস্বাভাবিক জিনিসপত্র দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা খবর দেন। পরে জেলা নির্বাচন অফিস ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এসব উদ্ধার করে।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, প্রথমে এলাকাবাসী ময়লার স্তূপে ছড়ানো অবস্থায় অসংখ্য কার্ড ও কাগজপত্র পড়ে থাকতে দেখে। সন্দেহ হওয়ায় তারা বিষয়টি নির্বাচন অফিসকে জানান। পরে জেলা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা গিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করেন। গণনা শেষে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ৪ হাজার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু পোলিং অফিসারের কার্ড ও সিলও উদ্ধার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “উদ্ধারকৃত সব এনআইডি গাজীপুর জেলার। এগুলো কীভাবে এখানে এলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি থানায় জানিয়েছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, উদ্ধার হওয়া এনআইডি ও অন্যান্য কাগজপত্রের বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। কেন এবং কীভাবে এত বিপুল সংখ্যক আসল এনআইডি কার্ড গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে ভাগাড়ে ফেলা হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সব কার্ড গাজীপুর জেলার হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, আসলেই কি এগুলো বিতরণের জন্য নির্ধারিত ছিল নাকি হারানো বা বাতিল হওয়া এনআইডি? নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে এখনো কিছু নিশ্চিত করেননি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মুদ্রণ বা বিতরণ প্রক্রিয়ার সময় কোনোভাবে এই কার্ডগুলো হারিয়ে গিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে। আবার কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এসব কার্ড ফেলে দিয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রিন্ট ও বিতরণের প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর? সাধারণ মানুষ মনে করছেন, যদি আসল এনআইডি এভাবে ভাগাড়ে পড়ে থাকতে পারে, তবে তা অপব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। বিশেষ করে অপরাধী চক্রের হাতে পড়লে এসব কার্ড জালিয়াতি, প্রতারণা বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা উদ্ধারকৃত সব এনআইডি কার্ড ও কাগজপত্র প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি অবগত আছেন। শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশও জানিয়েছে, এ ঘটনায় কারও অবহেলা বা ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জে ভাগাড় থেকে একসঙ্গে এত বিপুল পরিমাণ এনআইডি উদ্ধার হওয়ার ঘটনা শুধু প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকেই নয়, সাধারণ মানুষকেও বিস্মিত করেছে। এখন সবার নজর তদন্তের দিকে—কীভাবে হাজারো এনআইডি গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে এলো এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত। তদন্তে বেরিয়ে এলে হয়তো এ ঘটনায় জড়িয়ে থাকা রহস্য উদঘাটন হবে, আর জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া উদ্বেগ কিছুটা হলেও কমবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ