
ছবি: সংগৃহীত
প্রাইভেট পড়ুয়া কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাতে খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে সড়ক অবরোধ পালন করা হয়েছে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে অবরোধ শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে, পিকেটিং করে অবরোধকারীরা শহরের জীবন থমকে দিয়েছে। অবরোধের কারণে সাজেক ভ্যালিতে আটকা পড়েছেন প্রায় দুই হাজার পর্যটক, অন্যদিকে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর ২টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খাগড়াছড়ি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় এবং জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য এ ধারা আরোপ করা হয়েছে। ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বজায় রাখতে। খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরান কবীর উদ্দিন এক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অবরোধের সময় সকাল থেকে খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী ব্রিজ, স্টেডিয়াম এলাকা ও গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি যৌথ খামার এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিং করা হয়। অবরোধের কারণে শহরের দূরপাল্লার বাস, নৈশকোচ ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকে। খাগড়াছড়ি-সাজেক রুটের পরিবহন কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আরিফ জানিয়েছেন, শুক্রবার অন্তত ২০০টির বেশি গাড়িতে প্রায় ২ হাজার পর্যটক সাজেক ভ্রমণে ছিলেন। তবে অবরোধ চলাকালে কোনও বড় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন থাকায় নৈশকোচগুলো নিরাপদে শহরে পৌঁছেছে।
অবরোধের পেছনের মূল কারণ গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় প্রাইভেট পড়ুয়া এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তার দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে শুরু হয় অবরোধ।
অবরোধ চলাকালে মহাজনপাড়া এলাকায় পাহাড়ি যুবকরা হাতে ভারী অস্ত্র ও গুলতি ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যা দেখে পার্বত্য এলাকার শান্তিপ্রিয় বাসিন্দারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করছেন, শিক্ষার্থীদের ব্যানার ব্যবহার করে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের উসকানি দিচ্ছে। ভিডিওতে প্রদর্শিত সহিংসদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে এবং তাকে ছয় দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। অবরোধ ও সহিংসতা চলাকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসন ও বিজিবি তৎপর ছিল। প্রশাসনের তৎপরতায় শহরে বড় ধরনের প্রভাব না পড়লেও জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে এবং সড়কে চলাচল প্রায় থমকে গেছে।
উল্লেখযোগ্য যে, অবরোধের কারণে পর্যটক ও সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়লেও, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংসতা রোধে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ