
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচার এখন একেবারেই শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মামলাটি তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৫৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
আজ শুরু হচ্ছে মামলার সর্বশেষ সাক্ষী, অর্থাৎ তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে বিচার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে এবং রায় ঘোষণার জন্য প্রস্তুত হবে। ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি গ্রহণ শেষ হলে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও আসামি। তবে চৌধুরী মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবেও জেরা দিয়েছেন। আর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করছেন।
প্রসিকিউশন দাবি করছে, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরার মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম সাংবাদিকদের বলেন, “৫৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়েছে। এ সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আমরা বিশ্বাস করি যে, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শেষ হলে মামলাটি যুক্তিতর্কের জন্য প্রস্তুত হবে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান সম্ভব।”
অন্যদিকে, আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন দাবি করেছেন, “এখন পর্যন্ত প্রসিকিউশন পক্ষ যেসব সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছে, তা থেকে আসামিদের সাজা দেওয়ার মতো কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।”
মামলার পটভূমি অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই-অগাস্ট গণ অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি প্রথম। পরে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে এই মামলায় আসামি করা হয়।
প্রসিকিউশন পক্ষের অভিযোগে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটিসহ পাঁচটি নির্দিষ্ট অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে দাখিল করা হয়। ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয় এবং ৩ আগস্ট বিচার শুরু হয়।
মামলার সাক্ষী হিসাবে বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তি উপস্থাপন হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, নিহতের পরিবার, চিকিৎসক, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাদের জবানবন্দি থেকে দেখা গেছে, জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ ও বিশৃঙ্খলার ভয়াবহতা ঘটে এবং এতে শেখ হাসিনা, কামাল ও অন্যান্যদের দায়ী করা হয়েছে। সাক্ষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
এই মামলার রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সমাপ্ত হবে। মামলাটি শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, আন্তর্জাতিক আইনি মাপকাঠিতেও নজরকাড়া মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়া শেষে রায়ের মাধ্যমে দেশের আইনি ও ন্যায়বিচারের ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ