
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বড় ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবারও দেশি পর্যবেক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকছে। এর অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে ৭৩টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে ইসি।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক এ তথ্য গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মোট ৩১৮টি প্রতিষ্ঠান ভোটের সময় পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করার জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৭৩টি সংস্থাকে নিবন্ধনযোগ্য বিবেচনায় বিজ্ঞপ্তিতে নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
ইসির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই ৭৩ সংস্থার বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট সব দাবি ও আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত নিবন্ধন তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, ভোট পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি ও কার্যক্রম নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে সাহায্য করে। তাই নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যথাসম্ভব কঠোর যাচাই-বাছাই করা হয়েছে, যাতে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলো বাদ পড়ে।
বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সংস্থাগুলোর নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। প্রথমে প্রতি বছর মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে পাঁচ বছর মেয়াদি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।
-
২০০৮ সালে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার কমিশন ১৩৮ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয়। সে নির্বাচনে দেশি ৭৫টি সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণ করে।
-
২০১১ সালে আরও ১২০টি সংস্থা নিবন্ধন পায়। এগুলোর নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। পরে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন তা আরও এক বছর বাড়ায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ৩৫টি প্রতিষ্ঠান মাঠে কাজ করে।
-
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবেদন করেছিল ১৯৯ প্রতিষ্ঠান। কে এম নূরুল হুদা কমিশন নিবন্ধন দেয় ১১৯টিকে। তবে ভোটের দিন সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণে অংশ নেয় ৮১টি দেশি সংস্থা।
-
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ২১০টি আবেদনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করেছিল।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহল এবং সুশীল সমাজে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ থাকায় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা এবার আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিরপেক্ষ ও দক্ষ পর্যবেক্ষকরা থাকলে ভোটের পরিবেশে আস্থা তৈরি হয়, যা জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সহায়ক হবে।
ইসির কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ শুধু ভোটের দিন নয়, বরং পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই এবারও এ খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত আপত্তি জমা দেওয়ার সুযোগ থাকায় এখনো নিবন্ধনের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত পর্যায়ে ৭৩টির কাছাকাছি সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণে মাঠে থাকবে।
এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আবারও একটি বৃহৎ ও বহুমাত্রিক পর্যবেক্ষক কাঠামোর অধীনে নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষকদের কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ