
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি সিনেমার জন্য বড় একটি সাফল্যের খবর এসেছে। ৯৮তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে লিসা গাজী পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বাড়ির নাম শাহানা’। বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র (ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম) বিভাগে লড়বে ছবিটি। অস্কারের মতো মর্যাদাপূর্ণ আসরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়া নিঃসন্দেহে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য আনন্দের বিষয়।
শনিবার ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয় অস্কার বাংলাদেশ কমিটি। তারা জানায়, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এ বছর মোট পাঁচটি চলচ্চিত্র কমিটির কাছে জমা পড়ে। চলচ্চিত্রগুলো হলো— ‘সাবা’, ‘বাড়ির নাম শাহানা’, ‘নকশিকাঁথার জমিন’, ‘প্রিয় মালতী’ এবং ‘ময়না’।
প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে দীর্ঘ আলোচনা করে কমিটি চূড়ান্তভাবে ‘বাড়ির নাম শাহানা’কে মনোনীত করে। এর মাধ্যমে ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত অস্কারে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের টিকিট পেল।
‘বাড়ির নাম শাহানা’ যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেকটিভ এবং গুপী বাঘা প্রোডাকশনস লিমিটেড। ২০২৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ছবিটি দেশের ৯টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুক্তির পর থেকেই ছবিটি সমালোচক ও দর্শকের দৃষ্টি কাড়ে। নারীর স্বাধীনতা, সামাজিক বাস্তবতা এবং পরিচয়বোধকে কেন্দ্র করে নির্মিত ছবিটি দর্শকের মনে আলোচনার জন্ম দেয়।
চলচ্চিত্রটির পরিচালক লিসা গাজী দীর্ঘদিন ধরে থিয়েটার, টেলিভিশন এবং সিনেমার সঙ্গে যুক্ত। নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজ পরিবর্তনের বার্তা বহনকারী নাটক ও চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছেন। তার নির্মাণশৈলীর ভিন্নতা ও সামাজিক ইস্যুতে সাহসী বক্তব্যই এই ছবির অন্যতম শক্তি বলে মনে করেন সমালোচকরা।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর একটি চলচ্চিত্র অস্কারের জন্য পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অস্কার বাংলাদেশ কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যান, পরিচালক, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি জুরি বোর্ড গঠিত হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রযোজকরা তাদের চলচ্চিত্র জমা দেন। এরপর নিয়ম মেনে যাচাই-বাছাই করে একটি চলচ্চিত্র মনোনীত করা হয়।
কমিটির একজন সদস্য সংবাদ সম্মেলনে বলেন— “আমরা সব ছবিই মনোযোগ দিয়ে দেখেছি। প্রত্যেকটি ছবির আলাদা আলাদা শক্তি ছিল। তবে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিযোগিতা করার মতো বিষয়বস্তু, নির্মাণশৈলী ও উপস্থাপনার জন্য আমরা ‘বাড়ির নাম শাহানা’-কে বেছে নিয়েছি।”
বাংলাদেশ থেকে অস্কারে প্রতিনিধিত্ব করার ইতিহাস তেমন দীর্ঘ নয়। তবে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে দেশ থেকে চলচ্চিত্র জমা পড়ছে। যদিও এখনো কোনো চলচ্চিত্র মনোনয়ন তালিকায় জায়গা করতে পারেনি, তবুও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরছে।
চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অস্কারে প্রতিনিধিত্ব শুধু একটি চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি নয়, বরং বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। এটি বিদেশি দর্শকদের কাছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করে।
‘বাড়ির নাম শাহানা’ নির্বাচিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও প্রযোজনা দলের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবির প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন অনেকেই। দর্শকরাও আশাবাদী, এবার হয়তো বাংলাদেশি চলচ্চিত্র আরও দূর এগোতে পারবে।
পরিচালক লিসা গাজী সংবাদ সম্মেলনে বলেন— “এই স্বীকৃতি আমাদের চলচ্চিত্র টিমের জন্য বিশাল অনুপ্রেরণা। আমরা চাই আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে বাংলাদেশের গল্প পৌঁছে দিতে। অস্কারে নির্বাচিত হওয়া মানে শুধু আমার বা আমাদের টিমের সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য বড় এক অর্জন।”
সব মিলিয়ে ‘বাড়ির নাম শাহানা’ শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছে। অস্কারের মঞ্চে এটি কত দূর এগোতে পারে, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে এ নিয়ে দেশজুড়ে যে আনন্দ ও গর্ব তৈরি হয়েছে, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করছে— আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে দর্শকের প্রত্যাশা দিন দিন বাড়ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ