
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আজ রবিবার থেকে শুরু করছে বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত নির্বাচনী সংলাপ। অক্টোবর মাস জুড়ে এই সংলাপ চলবে, যেখানে ধাপে ধাপে অংশ নেবেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দল, নারী প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীরা। এই উদ্যোগকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রথম ধাপের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৩০ জন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে থাকবেন মানবাধিকারকর্মী, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, আইনজ্ঞ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা। একই দিন দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ, যেখানে উপস্থিত থাকবেন ৩৩ জন শিক্ষাবিদ। তাদের মতামত ইসির নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নীতিমালায় প্রতিফলিত করার প্রত্যাশা করছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে সংলাপে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। পাশাপাশি নারী প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, গণমাধ্যমকর্মী ও নির্বাচনী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। কমিশনের ধারণা, এই সংলাপগুলোতে আসন্ন নির্বাচনের নানা দিক যেমন ভোটগ্রহণের প্রযুক্তি ব্যবহার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দলের আচরণবিধি, পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা ও প্রবাসী ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি বিষয় উঠে আসবে।
ইসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই সব মহলের মতামত গ্রহণ করে একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে। এজন্য এই সংলাপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বাংলাদেশে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ৫৬টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছে। তবে পরবর্তীতে শর্ত পূরণে ব্যর্থতা, শর্ত প্রতিপালনে অবহেলা এবং আদালতের আদেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। এসব দল হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি এবং জাগপা।
সাম্প্রতিক সময়ে আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাগপার নিবন্ধন পুনর্বহাল হয়। তবে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র জামায়াতকে নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে আদালতের আদেশে নতুন একটি দল, বাংলাদেশ লেবার পার্টি নিবন্ধন পেয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই ওঠানামা আসন্ন নির্বাচনে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলেরও আগ্রহ রয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছে। সেক্ষেত্রে এই সংলাপগুলোকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের একটি সুযোগ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিরোধী দলগুলো সব সময় অভিযোগ করে এসেছে, তাদের মতামত যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। তাই ইসির এ উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা এখন পর্যবেক্ষণের বিষয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংলাপের মূল সাফল্য নির্ভর করবে অংশগ্রহণকারীদের মতামত কতটা আন্তরিকভাবে শোনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে তা কার্যকর পদক্ষেপে রূপান্তরিত হয় কিনা তার ওপর।
ইসি ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। অর্থাৎ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আজ থেকে শুরু হওয়া নির্বাচন কমিশনের এই সংলাপ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম নয়, বরং আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল, নারী প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের মতামত কতটা প্রতিফলিত হয়, তার ওপরই নির্ভর করবে কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা এবং আসন্ন নির্বাচনের সফলতা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ