
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের ইতিহাসে নথিভুক্ত বৃহৎ অর্থ আত্মসাতের মামলার এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এমডিএফ) থেকে প্রায় **৫৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এবং বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সালমান এফ রহমানসহ মোট ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বিটিআরসির পক্ষে সংস্থার সিনিয়র সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় এ মামলাটি করেন। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ (সংশোধনী ২০১০) এর ধারা ৭৩, ৭৪ ও ৭৬ এবং পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৪২০/৪০৬ ধারায়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারদের পাশাপাশি সালমান এফ রহমানের পরিবারের সদস্যরাও মামলায় নাম রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—সোহেল এফ রহমান (বড় ভাই), শায়ান এফ রহমান (সন্তান)।
মামলায় শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামের (আইওএফ) প্রভাবশালী একাধিক নির্বাহী কমিটির সদস্যকেও আসামি করা হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
-
একেএম শামসুদ্দোহা (সভাপতি)
-
মোহাম্মদ আবদুস সালাম (সহ-সভাপতি)
-
সৈয়দ মঈনুল হক, (অব.) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল হান্নান, আশিক আহমেদ, গাজী মো. সালাহউদ্দিন, হাফিজুর রহমান, ইমরান করিম, কফিল এইচএস মুয়ীদ, খালিদ ইসলাম, মো. মাহতাবুল আমিন, মো. জয়নাল আবেদীন, মীর নাসির হোসেন, মোহাম্মদ আজিজুল হক, মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন, আবুল কে. শামসুদ্দিন, নাদির শাহ কোরেশী, নজরুল ইসলাম, এসএম আশিকুর রহমান, সোহেল শরীফ, তারেক একরামুল হক, তাজিন আলম এবং সিসিও মুসফিক মনজুর।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আইওএফ গঠনের পর প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স ও চুক্তির শর্ত ভঙ্গসহ প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাত করেছে। নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য আদায়কৃত মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের মূল অংশীদার ছিলেন আইওএফ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আন্তর্জাতিক কল পরিচালনায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক গেটওয়ে খাত কুক্ষিগত করেছিলেন সালমান এফ রহমান। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে আইওএফ নামের সিন্ডিকেট, যার মাধ্যমে নিয়মিত প্রতি মাসে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের বিপুল অঙ্কের অর্থ বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেড-এ জমা করতে হতো। তবে এই প্রতিষ্ঠানটির নামে আইজিডব্লিউ পরিচালনার কোনো বৈধ লাইসেন্স ছিল না।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অর্থ সংগ্রহ করা হলেও প্রকৃত ব্যবহার সম্পর্কে অবগত ছিলেন না খোদ অপারেটররাই।
গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম, যিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, জানিয়েছেন, বিটিআরসি বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছে। ২৭ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এখন মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে।
বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের উপ-পরিচালক মাইদুল ইসলাম বলেন, “সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান ও আইওএফ ফোরামের কিছু প্রাক্তন নির্বাহী কমিটির সদস্য ২০১৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় মোট ২৭ জনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যার কারণে বিটিআরসি মামলা দায়ের করেছে।”
মামলাটি বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই মামলার পরবর্তী তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া টেলিযোগাযোগ খাতে সততার স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্বশীলতার বিষয়গুলোকে আরও গুরুত্ব দেবে।
এছাড়া, মামলায় উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হলে, এটি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ এবং শিল্পখাতে নীতি-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ