
ছবি: সংগৃহীত
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নেমে বাংলাদেশ যেন আবুধাবির প্রতিশোধই নিল। গ্রুপ পর্বে হারের তিক্ত স্মৃতি ভুলে লিটন দাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৪ উইকেটের জয়ে শুরু করল এশিয়া কাপের সুপার ফোর। এই জয়ে শুধু প্রতিশোধই নয়, শিরোপা লড়াইয়ের দৌড়ে আত্মবিশ্বাসও পেল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
১৬৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি। ইনিংসের মাত্র পঞ্চম বলেই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম শূন্য রানে ফিরলে বাংলাদেশ চাপে পড়ে। তবে সেই চাপ সামলে নেন আরেক ওপেনার সাইফ হাসান ও অধিনায়ক লিটন দাস।
দুজনের দ্বিতীয় উইকেট জুটি থেকে আসে ৫৯ রান। এ সময় লিটন ব্যক্তিগত ২৩ রানে বিদায় নিলেও নিজের নাম তুললেন ইতিহাসে। তিনি পেছনে ফেললেন সাকিব আল হাসানকে, হয়ে গেলেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের মালিক। লিটনের ঝুলিতে এখন ২,৫৫৬ রান, আর সাকিবের ২,৫৫১।
লিটনের বিদায়ের পর দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সাইফ হাসান ও তরুণ তাওহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে তারা জোট বাঁধেন ৫৪ রানের। সাইফ খেলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি, ৪ ছক্কা ও ২ চারের মিশেলে ৬১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে ফেরেন সাজঘরে।
সাইফের বিদায়ের পরও ব্যাটিং চালিয়ে যান হৃদয়। দুর্দান্ত ছন্দে খেলা হৃদয় ৪ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন। জয় হাতের নাগালে নিয়ে এলেও যখন দলের দরকার মাত্র ১০ রান, তখন দুষ্মন্ত চামিরার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তার বিদায়ের পর ম্যাচে খানিকটা উত্তেজনা তৈরি হয়।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫ রান। জাকের আলি অনিক প্রথম বলেই মারেন চার, ফলে ম্যাচ ড্রয়ের সমীকরণ নিশ্চিত হয়। কিন্তু এরপর টানা উইকেট হারিয়ে ম্যাচে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। জাকের ও শেখ মেহেদী পরপর আউট হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ কিছুটা চাপেই পড়ে। তবে নাসুম আহমেদ শান্ত মাথায় খেলে পঞ্চম বলে এক রান নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন, নিশ্চিত করেন প্রতিশোধের জয়।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা শুরুটা ভালো করে। ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস উদ্বোধনী জুটিতে ৪৪ রান যোগ করেন। কিন্তু পরের ধাক্কায় মাত্র ২২ রানের ব্যবধানে তারা হারায় ৩ উইকেট। এতে বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে।
তবে শেষ দিকে দায়িত্ব নেন সাবেক অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তিনি খেলেন ঝোড়ো ইনিংস, ৩৭ বলে অপরাজিত ৬৪ রান। ১৭২.৯৭ স্ট্রাইকরেটে খেলা তার ইনিংস সাজানো ছিল ৬ ছক্কা ও ৩ চার দিয়ে। শানাকার ঝলকেই লঙ্কানরা দাঁড় করায় ৭ উইকেটে ১৬৮ রানের লড়াকু সংগ্রহ।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান। বল হাতে শুরুর ধাক্কা সামলানো এবং শেষের ঝোড়ো ব্যাটিং ঠেকানো—দুটোই কঠিন ছিল। তবু মুস্তাফিজ নিজের অভিজ্ঞতায় উইকেট তুলে নিয়ে লঙ্কানদের বড় সংগ্রহ আটকাতে ভূমিকা রাখেন।
এই ম্যাচকে ঘিরে আলাদা আবেগ কাজ করছিল লিটনদের মধ্যে। আবুধাবিতে হারের স্মৃতি ভোলানোই ছিল লক্ষ্য। সেটিই সম্ভব হলো দুবাইয়ের মাটিতে। সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়ের জোড়া ফিফটি, লিটনের রেকর্ড, মুস্তাফিজের বোলিং—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পেল প্রতিশোধের মিষ্টি জয়।
এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শুরুটা জয় দিয়ে হওয়ায় এখন লাল-সবুজ শিবিরে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। সামনে অপেক্ষা আরও বড় লড়াই, আর এই জয় হয়ে উঠতে পারে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের সোপান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ