
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে নতুন এক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে গণ অধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দুটি দল এখন আলোচনা করছে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই দুটি দল একীভূত হলে এতে অন্য ছোট রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও যুক্ত হতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন উঠেছে। তবে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু জটিলতা সামনে এসেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে—একীভূত হওয়ার পর দলের নাম কী হবে? নেতৃত্বে থাকবেন কে? আর কোন কাঠামোয় দল পরিচালিত হবে?
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রাজনীতির ময়দানে উঠে আসা তরুণ নেতৃত্বের অংশ ছিলো গণ অধিকার পরিষদ। অন্যদিকে, এনসিপি তরুণদের একটি বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করছে গত কয়েক বছর ধরে। উভয় দলের মধ্যে একাধিকবার সাংগঠনিক পর্যায়ে মতবিনিময় হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস ও আদর্শিক অবস্থানের মিল থাকায় একীভূত হওয়ার আলোচনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, একীভূত হলেও এনসিপির নাম পরিবর্তন হবে না। বরং অন্যান্য দলকে এনসিপির সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়াই এখন আলোচনায় আছে। তার ভাষায়, “আমরা চাই বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে একীভূত হোক। তবে নাম পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছা আপাতত নেই।”
দলীয় সূত্র বলছে, যদি একীভূত হয়, তবে সম্ভবত নতুন দল ‘এনসিপি’ নামেই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে। এভাবে গণ অধিকার পরিষদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বা তাদের নাম কেবল ইতিহাসে থেকে যাবে।
এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে, একীভূত হলে দলের প্রধান হিসেবে সামনে আসবেন এনসিপির নাহিদ ইসলাম। অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতা নুরুল হক নুরকে রাখা হতে পারে দলের দ্বিতীয় অবস্থানে বা একটি সম্মানজনক পদে।
দুই দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে, শীর্ষ নেতৃত্ব গঠনে মোট ১০ জনের একটি পর্ষদ তৈরি করা হতে পারে, যেখানে গণ অধিকার পরিষদ থেকে ৫ জন এবং এনসিপি থেকে ৫ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই পর্ষদই একীভূত দলের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেছেন, “রাজনীতিতে আলোচনা সব সময় হয়। এনসিপির অনেকেই ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। সেই অভিজ্ঞতার কারণেই আমাদের ও তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন আলোচনা চলছে—কীভাবে দেশ ও জাতির কল্যাণে একসঙ্গে কাজ করা যায়।”
তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, গণ অধিকার পরিষদের তরুণ নেতৃত্ব একীভূত হওয়ার আলোচনায় ইতিবাচক অবস্থানে আছে। তবে তারা চান আলোচনায় যথেষ্ট ছাড় দিয়ে উভয় পক্ষের জন্য সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করা হোক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে ছোট ছোট দলগুলোর একীভূত হওয়া জরুরি। এতে সংগঠনগুলো টিকে থাকার সুযোগ পাবে, নেতৃত্ব বিকাশের সম্ভাবনা বাড়বে এবং জাতীয় রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি হিসেবে জায়গা তৈরি করতে পারবে। তবে নাম ও নেতৃত্বের প্রশ্নে আপস করতে না পারলে এই উদ্যোগ ভেস্তেও যেতে পারে।
দল দুটি বর্তমানে নিয়মিত বৈঠক করছে এবং সাংগঠনিকভাবে সমন্বয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। নভেম্বরের মধ্যেই এ বিষয়ে একটি অগ্রগতি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে—গণ অধিকার পরিষদ নেতৃত্বের প্রশ্নে কতটা ছাড় দিতে রাজি এবং এনসিপি তাদের অবস্থান কতটা নমনীয় করে তোলে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবার নজর এই আলোচনার দিকে। গণ অধিকার পরিষদ ও এনসিপি এক হলে কি তরুণ নেতৃত্বের নতুন বিকল্প শক্তি গড়ে উঠবে, নাকি নাম-নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে এই প্রক্রিয়া ভেস্তে যাবে—তা সময়ই বলে দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ