
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগোবার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। একসময়ের মিত্ররা এখন মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যাচ্ছে, আর রাজনৈতিক ভাঙন এখন প্রকাশ্য। জুলাই বিপ্লবের সময় যে ঐক্য দেখা দিয়েছিল, তা আজ অনেকাংশেই ভেঙে গেছে। বিশেষ করে সরকার ঘোষিত নির্বাচনের তারিখ—ফেব্রুয়ারি—যত ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়ে চলেছে। দীর্ঘ আলোচনার পরও জুলাই সনদ-এর বাস্তবায়ন এবং সংখ্যানুপাতিক (পিআর) ভোট পদ্ধতি, জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য কাটেনি।
এই অবস্থায় শুক্রবার থেকে তিন দিনের কর্মসূচিতে রাজপথে এসেছে জামায়ত, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি রাজনৈতিক দল। তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আয়োজন, জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যবস্থা, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা ও অন্যান্য দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছে। সাত দলের মধ্যে রয়েছে জামায়াত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। এছাড়া এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে নামবে বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদিও দলগুলো কাগজে কলমে কোনো জোটের কথা ঘোষণা করেনি, তবে তাদের আন্দোলন বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দৃশ্যমান হতে পারে। জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে—জামায়াত ও সমমনা দলগুলো কি বিএনপির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী জোট গড়ে তুলছে?
এদিকে বিএনপি জামায়াতসহ অন্যান্য দলের কর্মসূচিকে সতর্ক নজরে রাখছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এই আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রভাবিত করতে পারে। তারা বলছেন, যদি বিএনপি পাল্টা কর্মসূচি দেয়, তবে সংঘাত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, আন্দোলন হয়তো সরকারের উদ্দেশ্যে হলেও মূল দ্বন্দ্ব বিএনপির সঙ্গে। কারণ, জুলাই সনদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন, সংখ্যানুপাতিক ভোট পদ্ধতি, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা ও অন্যান্য ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ দলগুলোর মতানৈক্য আছে।
বিএনপি নেতারা আশঙ্কা করছেন, রাজপথে আন্দোলনের ভিন্ন উদ্দেশ্য প্রণোদনা পেতে পারে। কোনো মহল এটিকে ব্যবহার করে দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হিসেবে দেখার জন্য ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে আসছে। তবে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বহু বৈঠক হলেও সমাধান এখনও হয়নি। এই অবস্থায়, রাজপথে কর্মসূচি চাপ সৃষ্টি করলে তা দলের দরকষাকষি এবং আন্দোলনের প্রভাবকে বাড়িয়ে দিতে পারে। জামায়াতসহ দলগুলো বলছে, তাদের আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়; এটি জনগণের স্বার্থে। তারা চাইছেন জুলাই সনদ বা রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হোক।
রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি যদি অস্থিরতার দিকে ঠেলতে থাকে, তবে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। বিএনপি ইতিমধ্যেই সতর্কতা অবলম্বন করছে। তারা রাজপথে সংঘাতের কোনো সুযোগ দিতে চায় না এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিবর্তিত অবস্থায় ঐক্য ধরে রাখতে হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ না করলে বিভক্তি-বিভাজনের সুযোগ নেবে পরাজিত শক্তি। তাই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোকে সচেতন থাকতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ