
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত ঘিরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বের দেশগুলোকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—ইসরাইলের হুমকিতে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেছেন, প্রতিশোধ বা দমনমূলক পদক্ষেপের ভয় দেখিয়ে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নীরব রাখা হয়, তবে তা কেবল অন্যায়কে বৈধতা দেবে। তাই ইসরাইলের ভয়ভীতি বা হুমকি উপেক্ষা করে বিশ্বকে সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে।
আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব উঠতে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর একটি বড় অংশ এ প্রস্তাব সমর্থন করতে যাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। এরই মধ্যে ইসরাইল হুমকি দিয়েছে, এমন কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হলে তারা পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করবে।
এ হুমকির প্রেক্ষিতেই গুতেরেস স্পষ্ট করে বলেন, “আমাদের ভীত হওয়া উচিত নয়। ইসরাইল তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে—আমরা সমর্থন করি বা না করি। কিন্তু যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসঙ্গে অবস্থান নেয়, তবে অন্তত চাপ প্রয়োগের একটি সুযোগ তৈরি হবে।”
জাতিসংঘ মহাসচিব ইসরাইলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে চরম উদ্বেগজনক আখ্যা দেন। তার ভাষায়, “ইসরাইল ধাপে ধাপে পশ্চিম তীরে দখল বাড়াচ্ছে, একই সঙ্গে গাজায় সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। মহাসচিব হিসেবে কিংবা আমার জীবনের অভিজ্ঞতায় আমি কখনো এত মৃত্যু ও ধ্বংস দেখিনি।”
তিনি আরও বলেন, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো দুর্ভিক্ষ, স্বাস্থ্যসেবার সম্পূর্ণ অভাব এবং নিরাপদ আশ্রয় ছাড়াই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী গাজার পরিস্থিতিকে “গণহত্যা” হিসেবে অভিহিত করলেও গুতেরেস নিজে সরাসরি সেই শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। তিনি বলেন, “গণহত্যার আইনগত সংজ্ঞা দেওয়া আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আসল বিষয় শব্দ নয়, আসল বিষয় হচ্ছে বাস্তবে সেখানে কী ঘটছে।”
এ বক্তব্যকে অনেক বিশ্লেষক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হিসেবে দেখছেন। কারণ তিনি আইনগত পরিভাষা ব্যবহার না করলেও ইসরাইলি কর্মকাণ্ডের ভয়াবহতা এবং মানবিক বিপর্যয়কে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন।
এদিকে চলতি সপ্তাহেই ইসরাইল গাজায় নতুন করে স্থল অভিযান শুরু করেছে। সেনারা স্থানীয় বাসিন্দাদের দক্ষিণ দিকে চলে যেতে বলছে। তবে বাস্তবতা হলো—বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি পরিবারের পক্ষে এই যাত্রা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অনিশ্চিত। অনেকেই বলেছেন, তারা কোথায় গিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেবেন, সেটিই স্পষ্ট নয়। ফলে মানুষ দোটানায় পড়েছে—থাকলেও ঝুঁকি, আবার যেতে হলেও অজানা বিপদ।
গুতেরেস বলেন, গাজার জনগণ শুধু মৃত্যুর আতঙ্কে নয়, প্রতিদিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণেও হিমশিম খাচ্ছে।
-
খাদ্যের মারাত্মক সংকট, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে।
-
চিকিৎসা সেবা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে; ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব চরমে।
-
হাজার হাজার পরিবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে।
তিনি এটিকে মানবিক বিপর্যয়ের “অতুলনীয় দৃষ্টান্ত” আখ্যা দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখকষ্ট বর্ণনাতীত।
গুতেরেসের মতে, ইসরাইলের হুমকি বা প্রতিশোধের ভয়ে যদি জাতিসংঘ বা পশ্চিমা দেশগুলো পিছিয়ে যায়, তবে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। বরং এখনই বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে, যাতে ফিলিস্তিনের জনগণ ন্যায্য অধিকার পায় এবং দখল-ধ্বংসযজ্ঞ থামে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি স্পষ্ট সঙ্কেত দিয়েছে—ফিলিস্তিনের প্রশ্নে নীরব থাকা আর সম্ভব নয়। গুতেরেস যদিও সরাসরি ‘গণহত্যা’ শব্দ ব্যবহার করেননি, তবে তার মন্তব্য স্পষ্ট করেছে যে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবহেলা করতে পারবে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ