
ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কমিউনিস্ট পার্টির (ইউএমএল) চেয়ারম্যান কে পি শর্মা অলি প্রথমে সেনাবাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় ছিলেন। সেনা ব্যারাকে টানা ৯ দিন কাটানোর পর তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এখন ব্যক্তিগত আশ্রয়ে গেছেন। তার অবস্থান নিয়ে নানা জল্পনা থাকলেও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তিনি সম্ভবত কাঠমাণ্ডুর পূর্বে ভক্তপুর জেলার গুণ্ডু এলাকার একটি ব্যক্তিগত বাসভবনে উঠেছেন। বিষয়টি জানিয়েছে কাঠমাণ্ডু পোস্ট।
খবরে বলা হয়, ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করার পর থেকেই অলি রাজধানীর নিকটবর্তী শিবপুরীর সেনা স্টাফ কলেজে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি সেনা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে ছিলেন। সেনা সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার তিনি হঠাৎই সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি কোথায় থাকছেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
স্থানীয় গণমাধ্যমের দাবি, বর্তমানে তিনি কাঠমাণ্ডু থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত ভক্তপুর জেলার গুণ্ডু এলাকার একটি ব্যক্তিগত বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি নিশ্চিত করা হয়নি, তবে রাজনৈতিক মহলে এই খবর ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, সেনা নিরাপত্তা ছেড়ে দেওয়া মানে অলি এখন কিছুটা স্বস্তি বোধ করছেন, তবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথম প্রকাশ্য বিবৃতিতেই অলি ভারতের সমালোচনা করেছেন। নেপালের সংবিধান দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্ট দেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, নানা অবরোধ ও সার্বভৌমত্বের ওপর উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে নেপাল সংবিধান প্রণয়ন করেছিল।
তিনি ২০১৫ সালের কুখ্যাত অবরোধের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। ওই সময় নেপালের দক্ষিণ সীমান্তে জ্বালানি, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে দেশটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এই অবরোধ টানা ৫ মাস স্থায়ী হয়েছিল, সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তখন অভিযোগ ওঠে, ভারতের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে এই অবরোধে। যদিও ভারত সে সময় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিল, নেপাল সীমান্তের অভ্যন্তরে জাতিগত সংখ্যালঘুরাই পরিবহন বাধাগ্রস্ত করছে।
অলি তার পোস্টে সরাসরি ভারতের নাম নেননি, তবে তার বক্তব্য যে ভারতের দিকেই ইঙ্গিত করছে, তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “অবরোধ নেপালের পররাষ্ট্রনীতি এবং অবকাঠামোগত কৌশলের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে কাজ করেছে।”
অলি তার ফেসবুক পোস্টে আরও বলেন, তিনি কখনোই পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেননি। বরং ষড়যন্ত্রকারীরা আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে।
তার দাবি, যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ পুলিশের কাছে এমন অস্ত্র ছিলই না। তাই তিনি মনে করেন, আন্দোলনের মূল আয়োজকরা নিজেরাই স্বীকার করেছেন যে, অনুপ্রবেশকারীদের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। তার ভাষায়, “সরকার কখনোই পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে নির্দেশ দেয়নি। তদন্তে বেরিয়ে আসুক, কারা সেই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করেছে।”
অলি নেপালের রাজনীতিতে একজন বিতর্কিত হলেও প্রভাবশালী নেতা। দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই কমিউনিস্ট নেতা ভারতবিরোধী অবস্থান ও চীনপ্রীতির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তার নেতৃত্বে ২০১৫ সালে প্রণীত সংবিধানকে ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা আজও নেপালের রাজনীতিতে আলোচনার বিষয়।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও তিনি প্রথম বিবৃতিতে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় বোঝা যাচ্ছে, আগামীর রাজনৈতিক লড়াইতেও ভারত-নেপাল সম্পর্ক বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে নেপালের অভ্যন্তরে চীন ও ভারতের প্রভাব নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়ছে, সেখানে অলি আবারও কেন্দ্রীয় চরিত্রে উঠে আসতে পারেন বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অলি এখন ব্যক্তিগত আশ্রয়ে অবস্থান করছেন। তবে তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে দেশটিতে নানা আলোচনা চলছে। তিনি সেনা ব্যারাক ছেড়ে যাওয়ার পরও জনগণকে বার্তা দিতে ভোলেননি। ভারতের বিরুদ্ধে পরোক্ষ অভিযোগ এনে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তার লড়াই এখানেই শেষ নয়। বরং নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হওয়ার ইঙ্গিতই দিচ্ছেন তিনি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ