ছবি : সংগৃহীত
লন্ডনে থাকা প্রবাসী সাংবাদিক করাপশন ইন মিডিয়ার প্রধান সম্পাদক জাওয়াদ নির্ঝরের একটা পোস্টকে ঘিরে তুমুল আলোচনা চলছে।
গত বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) একটা তালিকা ফাঁস করেন সাংবাদিক নির্ঝর। পরে ওই তালিকা বিভিন্নজন শেয়ার আবার কেউ প্রথম পোস্টকারীর পোস্ট থেকে ডাউনলোড বা স্ক্রিনশট নিয়ে অনেকেই এ নিয়ে নানা মন্তব্য করেন। রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়াও বিশেষ করে মিডিয়াপাড়ায় এ তালিকা নিয়ে ব্যাপক কথাবার্তা চলে।
সিআরআই'র লোগো সংবলিত ওই তালিকায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ঘরানার ৭ জন সাংবাদিককে চলতি বছরের জুলাই মাসের টাকা দেয়া হয়েছে। কি কারণে এ টাকা দেয়া হয়েছে তার কোনো বিবরণ নেই। জনশ্রুতি রয়েছে, তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের সংবাদমাধ্যমের কয়েকজনকে মাসোহারা দিয়ে থাকে আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সিআরআই।
জাওয়াদ নির্ঝরের পোস্টে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ তালিকা রয়েছে। এর সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টায় মাঠে নামে বাংলা বার্তা। এ বিষয়ে বিএফআইইউতে যোগাযোগ করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন পরিচালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, "প্রতিদিন গোয়েন্দা মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো তথ্য, তালিকা, অভিযোগ আসে। আবার অনেক কিছু দুদকও খুঁজে বের করে।"
তিনি বলেন, "দুদকের কয়েকটা উইং রয়েছে। কোন উইংয়ের কার কাছে এটা বলা মুশকিল। এ তালিকা দুদকের কাছে আছে, এটা বলার যেমন সুযোগ নেই। আবার এটা এ তালিকা নেই তাও বলা যায় না।" তিনি বলেন, "এমনও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি যে, এটা প্রাইমারি কোনো স্টেজে আছে"।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, এ দুটি প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা এ তালিকার বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে কিছু না বললেও একটি গোয়েন্দা সংস্থার উপপরিচালক এ তালিকার বিষয়ে নিশ্চিত করেন। যিনি মূলত আর্থিক অপরাধ নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, এ তালিকা সরকারি একাধিক দপ্তরে দেয়া হয়েছে। মূলত এটা তাদেরই উদ্ধার করা। তিনি বলেন, শুধু এ তালিকা নিয়ে কাজ করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। তারা ওই প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস নিয়ে কাজ করছেন। কেন এবং কি উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হতো তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "জুলাইয়ের একটা তালিকা পাওয়া গেছে ওই প্রতিষ্ঠানে ফিল্ড পর্যায়ে কাজ করা একজন ব্যক্তির ফাইলে। যিনি মূলত টাকা সরবরাহ করতেন। ওই তালিকায় টেলিভিশনের ৬ জন এবং পত্রিকার একজন সম্পাদকের নাম রয়েছে।" এ তালিকায় দু একজনের নামের ইংরেজি বানান ভুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এটা মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা তার হিসেবের জন্য তার ফাইলে রেখেছেন। তবে তালিকা মিথ্যা না।"
তিনি জানান, তালিকায় যারা টাকা রিসিভ করেছেন ডানপাশে টিক মার্ক রয়েছে যেমন সময় টিভির এমডি আহমেদ যোবায়ের, একাত্তর টিভির এমডি মোজাম্মেল বাবু, একই টিভির প্রিন্সিপাল করেসপন্ডেন্ট ফারজানা রুপা, ডিবিসি নিউজ টিভির সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু এবং ওই চ্যানেলের এসাইনমেন্ট সম্পাদক মাসুদ কার্জনের নামের ডানপাশে টিক মার্ক রয়েছে। অর্থাৎ তারা জুলাই মাসের টাকা গ্রহন করেছেন। প্রতিমাসে মাসোহারা পান কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, "কিছু আলামত এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। মানে তারা আগে থেকে পেতেন।" তিনি বলেন, যে তালিকা প্রকাশ হয়েছে এর বাইরেও আরো বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যক্তি রয়েছেন যারা সিআরআই থেকে সুবিধা পেয়ে থাকেন। উপপরিচালক পদের ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জুলাই মাসের তালিকায় এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান প্রভাষ আমিনের নাম এলেও তিনি কোনো টাকা গ্রহন করেননি। তার নামের পাশে টিক মার্কও নেই তালিকায়। জুলাইয়ে তার নাম নতুনভাবে যুক্ত করা হলেও তিনি নেননি বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রভাষ আমিন আগে থেকে আর্থিক সুবিধা পেতেন এমন নথিও পাওয়া যায়নি হতে পারে নতুনভাবে তার নাম জুলাইয়ে যুক্ত করা হয়েছিলো। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান মুন্নী সাহা, আরেক সাংবাদিক সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায় মাসিক আর্থিক সুবিধাসহ প্রকল্পভিত্তিক সুবিধা পেতেন। এসবের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে এবং সে অনুযায়ী তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজের তথ্য বলছে, সিআরআই নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ভাইস চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি আজমিনা সিদ্দিক এবং ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, যারা কিনা ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের ভাই ও বোন, এই প্রতিষ্ঠানের আরও দুজন ট্রাস্টি। এই চারজন হলেন শেখ হাসিনা পরিবারের চার জ্যেষ্ঠ সদস্য। নেত্র নিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এএলবিডি ওয়েব টিম পরিচালনা করে সিআরআই। এই এএলবিডি হলো আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সংক্ষেপ।
বাংলাবার্তা/এআর