
ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) – একসময় দেশের একটি প্রভাবশালী সংস্থা; কিন্তু তিন সাবেক চেয়ারম্যান – এম বদিউজ্জামান, সৈয়দ ইকবাল মাহমুদ ও মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লা – ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ইশারায় এটি রূপান্তর করেছেন দুর্নীতির গহনডাল। তিনজনই দুর্নীতির অভিযোগে মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করেছেন, আর এখন কেউ জবাব দিচ্ছেন না।
১. এম বদিউজ্জামান: ‘পদ্মা স্পেশাল’ ক্লিনচিট রাজনীতি
২০১৩–২০১৬ সাল পর্যন্ত দুদক নেতৃত্বে থাকা এই কমিশনারকে অভিযোগে আনা হয় পদ্মা সেতু দুর্নীতিকাণ্ড ধামাচাপা দেয়ার জন্য।
কৃষি সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়ার মতো ব্যক্তিদের মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান।
তার অধীন কমিশন মোজাম্মেল হোসেন, আবুল কালমসহ রাজনীতিবিদের মামলা বন্ধ করে দেয়।
তিনি তার পদত্যাগত সংবাদের সময় বলেছিলেন, “পদ্মা প্রকল্পে মামলা করার মতো কোনো মেরিট ছিল না … পরবর্তী তদন্তে প্রমাণ হয়েছে অভিযোগ মিথ্যা।”
এই বক্তব্য আজও বিতর্কের কেন্দ্রে আছে।
২. সৈয়দ ইকবাল মাহমুদ: কানাডা থেকে পরিচালিত ‘অপারেশন ক্লিনচিট’
২০১৬–২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী ইকবাল মাহমুদ ছিলেন সমস্যা সৃষ্টি না করে ‘রাতারাতি ক্লিনচিট সিস্টেমের মাস্টার’ – অভিযোগের ভিত্তিতে ৫০০+ মামলা ও অনুসন্ধান নিষ্পত্তি করেন।
বিরোধী নেতা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত বিতর্কিত নির্বাচনোন্নীত মামলা প্রত্যাহার।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি উন্নত অর্থ পাচারের মাধ্যমে কানাডায় পাড়ি জমিয়ে পরিবারসহ বিলাসে জীবনযাপন করছেন।
এই সময়dua.comission দুই কমিশনার আ.ফ.ম আমিনুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক খান – যাদের গোপন তথ্য অনুসারে দুর্নীতিতে তারা জড়িত।
৩. মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লা: ‘মেরুদণ্ডহীন’ কমিশনের প্রতীক
তিনি ‘মেরুদণ্ডহীন’ লেবেল পেয়েছেন কারণ তার নেতৃত্বে হয়ে থাকে: রেল-ব্যাংক-বিমাসহ বড় দুর্নীতির কেস খুলে, শেষ পর্যন্ত সবথেকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে মামলা বন্ধ।
নজরুল ইসলাম বাবু, দীলিপ আগরওয়াল, মতিউর রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তের শুরু; কিন্তু সব মুছে যাওয়া ফাইলের মতো শেষ পর্যন্ত বন্ধ।
আদালতে তিনি বলেন, “আমি স্বাধীনভাবে কাজ করেছি… এখন ওই সময়ের কাজ নিয়ে কোনো কমেন্ট করতে চাই না।”
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
ব্যারিস্টার এ. এ. মাহবুব উদ্দিন খোকন (সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি): “দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করেনি; বরং বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সাজানো কেসে ব্যবহার হয়েছে। এসব ঘটনা তদন্ত হওয়া উচিত।”
দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মঈদুল ইসলাম: “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়… সাবেক চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থামছে না—এগুলি অবশ্যই অনুসন্ধান ও মামলা হওয়া উচিত।”
রাষ্ট্র তথা সাধারণ মানুষের ক্ষতি
দুদকের ভাবমূর্তি ধ্বংস: স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেনি।
রাজনৈতিক মাভাদাড়া ও প্রভাব: বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘পুতুলনাচ’ মামলা।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: প্রতিষ্ঠানের পুঁজি ঢেলে দুর্নীতির ঘেরাটোপ।
বিচার-বাধাপ্রণালী ব্যাহত: যুক্তিযুক্ত মামলা রক্ষার পরিবর্তে ক্ষমতাসীন সাংগঠনিক স্বার্থে মামলা মিটে যায়।
বিচার না হলে ‘তালেবিন্দু বদল’ শুরু হবে
দুদক যে একসময় দুর্নীতি দমনকারী সংস্থা ছিল – এখন তা অন্যায়ভাবে ক্ষমতার হাতিয়ার হয়ে গেছে।
তিন সাবেক চেয়ারম্যান – বদিউজ্জামান, ইকবাল মাহমুদ ও মঈনউদ্দীন আব্দুল্লা – যে ধরনের ‘অপারেশন ক্লিনচিট’ চালিয়েছেন তা রাষ্ট্র ও সমাজকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বর্তমান পরিবেশে জোর দাবি উঠছে: একটি স্বাধীন, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পুনর্গঠন সরকার ও জনগণের জন্য জরুরি।
তদন্ত ও বিচার না হলে, এটি একটি নজির তৈরি করে ‘দুদক’ আরও অপব্যবহারে পতিত হবে।
তথ্যসূত্র: দুদক সূত্র, বিভিন্ন আইনজীবী ও বিশ্লেষকদের বক্তব্য
বাংলাবার্তা/এসজে