
ছবি: সংগৃহীত
২২ মাস যাবৎ, গাজা যেন মৃত্যুর মেঘেই ঢাকা পড়ে আছে। প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সংখ্যা—হাসপাতালের করিডোর, রাস্তা, স্কুলের বারান্দা, ধ্বংসস্তূপের নিচে, এমনকি বাড়ির উঠোনে পর্যন্ত পড়ে রয়েছে অকাল মৃত্যুর নিদর্শন। অথচ, কবর দেওয়ার জায়গা নেই—একটি গন্তব্যহীন দেহের জন্য জায়গা কই?
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫৮,৪০০–৫৮,৬০০, আহত ১ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি, এবং ধ্বংসস্তূপে চাপা প্রায় ১০ হাজার অব্যাহত লাশ আছে ।
চালাক গবেষণা সংস্থা প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ–এর জরিপ মতে, ১৫ মাসে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৮৪,০০০,–অর্ধেক নারী, শিশু ও বৃদ্ধ ।
সরকারি ও স্বাধীন উভয় হিসাবই বলছে বিশাল এক মানবিক সংকট—অগণিত মৃতের সংখ্যা, ও কবর দেওয়ার অক্ষমতা।
পরিবারগুলো সাধারণত মৃতদেহের জন্য রাস্তার কোনো খোলা জায়গা বা জরাজীর্ণ ভূমি ব্যবহার করছে।
ভয়াবহ পরিমাণ মৃতের কারণে নিশ্চিত কবর না পাওয়ায় হুমকি তৈরি হচ্ছে সামাজিক ও ধর্মীয় মর্যাদার।
ফলে মানুষ নতুন কবর স্থান নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছে, অথবা অতিমাত্রার দায় এবং আবেগবাহী চাপের মুখে দেহ গৃহবাড়িতে রাখছে।
আইস্রায়েলের বিমান হামলায় সরাসরি সহিংসতায় নিহত প্রায় ৭৫,২০০ ফিলিস্তিনি, শরণার্থী ও উদ্ভাসিত ইসরায়েলের পানি বিতরণ কেন্দ্রেও নৃশংস হামলায় নিহত ৭০০–৮৭৫ জন। সাম্প্রতিক কালের সংঘর্ষে ৩১–৭৮ জন নিহত
UNICEF ও UNRWA–এর তথ্য মতে, শিশুদের মাত্র ৫.৫% থেকে বেড়ে ১০.২%–এ এসেছে তীব্র অপুষ্টির হার
ড্রিংকিং পানি ও ফুয়েল সংকট, হাসপাতালে অব্যবস্থা—সব মিলিয়ে ক্ষুধা, অসুস্থতা, মৃত্যু এক ভয়াবহ চক্র তৈরি করেছে।
ধসে পড়া ভবন-ধ্বংসস্তূপে মানুষের মৃতদেহ চাপা। খোলা জায়গায় গিয়ে ত্রাণ নেয়ার সময় গুলিতে নিহত ৩১ জন, এদের কয়েকটি শিশু ও নারী। পানি কেন্দ্রেও হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৭০০, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তথ্যে নিশ্চিত।
কলম্বিয়ার বোগোতা বৈঠকে ৩০-এরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা গাজা ও পশ্চিম তীরের অবৈধ দখল সম্পর্কে আলোচনা চালাচ্ছেন।
জাতিসংঘের ধাপে ধাপে চাপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সেফহাব নিশ্চিত করার আহ্বান করা হচ্ছে, বিশেষভাবে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের কল্যাণে।
গাজা এখন মৃতদেহের ঘাটতিতে নিমগ্ন। কবর না থাকায় মৃতের মতো বাঁচা মানুষদের অপরিচিত মৃত্যু—মানবিক সংকটের এক চরম পর্যায়। মৌলিক ইনফ্রা ও কবরস্থান ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজন এখন আগের চেয়ে বেশি জোরালো হয়ে ওঠেছে। নিষ্পত্তিমূলক রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া, এই সংকট দুররূদ্ধ হবে না—মানবিক এক বিপর্যয় ঠিক কোন পথে এগোবে, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক মহলের জরুরি ও ন্যায়সঙ্গত হস্তক্ষেপের ওপর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ