
ছবি: সংগৃহীত
দেশের ইতিহাসের একটি গৌরবোজ্জ্বল ও বেদনাবিধুর স্মৃতি নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় পর্যায়ে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’। প্রতি বছর এই দিনে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজ প্রাণ উৎসর্গ করা বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। ২০২৫ সালের এই বিশেষ দিনে বাংলাদেশের সরকার সব সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হচ্ছে এবং নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যেখানে সরকারিভাবে ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এদিনে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের সকল কূটনৈতিক মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়াও শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দেশের সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া আয়োজন করা হবে এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শহীদদের স্মরণে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
‘জুলাই শহীদ দিবস’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের এক কালো ও শ্রেষ্ঠত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭১ সালের এই মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতাকামী তরুণ প্রজন্মকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হাজার হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষ মাটির সঙ্গে মিশে যান, কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ ও সাহসের গল্প বাংলার ইতিহাসে চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে।
১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক এই হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ এবং শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার মূল্য বুঝিয়ে দিতে এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতেই প্রতিবছর এই দিবসটি পালিত হয়।
আজকের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা বিভিন্ন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। পাশাপাশি নানা স্মরণ সভা, আলোচনা, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে সারাদেশে। শহীদ বেদীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনও অংশগ্রহণ করেছে।
শহীদদের মাগফেরাত কামনায় দেশের প্রতিটি মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ দোয়া মাহফিল। একই সাথে অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে, যা দেশের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের সর্বস্তরের মানুষ আজকের দিনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করছেন। সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার স্মৃতিচারণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করছেন দেশের নাগরিকরা।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের দায়িত্ব। তাদের ত্যাগের ফলেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।”
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, “জুলাই শহীদ দিবস আমাদের জন্য শুধু শোকের দিন নয়, এটি আমাদের ঐক্যের প্রতীক এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রমাণ।”
সরকার ‘জুলাই শহীদ দিবস’কে জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস হিসেবে চিহ্নিত করে এর যথাযথ মর্যাদা রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী এদিন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শহীদদের স্মরণ করে একযোগে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, আগামী দিনগুলোতেও শহীদ দিবস যথাযথভাবে পালনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
‘জুলাই শহীদ দিবস’ আমাদের ইতিহাসের এক শ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন। প্রতি বছর এ দিনটি পালনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের স্মরণ করি, তাদের ত্যাগের মূল্য বুঝি এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করি। এভাবেই আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থির ও স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রসর হবো।
বাংলাবার্তা/এমএইচ