
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফের চালু হতে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা, যা দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় একটি ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রত্যাশিত এই বৃত্তি পরীক্ষা, যেখানে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে সারাদেশের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে একটি জরুরি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে, যেখানে বৃত্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সময়সূচি, বিষয়ভিত্তিক কাঠামো এবং অংশগ্রহণ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে যে কোনো একদিনে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। পরীক্ষার চূড়ান্ত তারিখ শিগগিরই নির্ধারণ করে জানানো হবে। পরীক্ষার সময় হবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, যা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত বলে মনে করছে অধিদপ্তর।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণমান ধরা হয়েছে ১০০ নম্বর, অর্থাৎ মোট ৫০০ নম্বরের ওপর ভিত্তি করে হবে বৃত্তির জন্য মূল্যায়ন। পরীক্ষার বিষয়গুলো হলো: বাংলা, ইংরেজি, প্রাথমিক গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান।
এই পাঁচ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করে প্রাথমিক বৃত্তির তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ, কেউ ইচ্ছা করলেও পরীক্ষায় না বসে পার পাবেন না। উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সুসংবদ্ধ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসিই) চালু হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। এরপর প্রায় দেড় দশক পিইসিই-ই পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত অর্জনের প্রধান মানদণ্ড ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় এই পরীক্ষার অতিরিক্ত চাপ, মান নিয়ন্ত্রণ, প্রশ্নফাঁসসহ নানা বিতর্ক উঠায় ২০২৩ সালে পিইসিই বাতিল করা হয়। এরপর থেকেই আবার বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় আসে সরকারের শিক্ষা বিভাগে।
পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেধাতালিকার ভিত্তিতে বৃত্তির টাকা প্রদান করা হবে। এই বৃত্তি সাধারণত মাসিক হারে দেওয়া হয় এবং মাধ্যমিক স্তরের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা কার্যকর থাকে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হয় এবং পরিবারের আর্থিক সহায়তাও পায়।
এ পরীক্ষার ঘোষণা আসার পর থেকেই দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ প্রস্তুতি ক্লাস চালুর প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বিষয়ভিত্তিক পাঠদানে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন, যাতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা এবং বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় মান অর্জন করতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে একাধিক শিক্ষক জানান, "এটা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীরা আবার বৃত্তির জন্য প্রতিযোগিতায় আসবে। এতে মেধা বিকাশ হবে, শিক্ষকদের দায়িত্ববোধও বাড়বে।" তবে তাঁরা চান, পরীক্ষাটি যেন যথাযথভাবে পরিচালিত হয় এবং প্রশ্নফাঁস বা গাইড নির্ভরতা থেকে এটি যেন রক্ষা করা যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, পরীক্ষাটি শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে আয়োজন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, বিতরণ, পরীক্ষাকেন্দ্র নির্ধারণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর বৃত্তি পরীক্ষা ফিরে আসা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি মাইলফলক ঘটনা হতে পারে। তবে এটি সফল করতে হলে সঠিক প্রস্তুতি, মানসম্মত প্রশ্ন, উত্তরপত্র মূল্যায়নে সততা ও সঠিক সময়মতো ফল প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ