
ছবি: সংগৃহীত
ছোট পর্দার পরিচিত মুখ তটিনী। অভিনয়ের পাশাপাশি ভ্রমণ তার অন্যতম প্রিয় সঙ্গী। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই বেড়িয়ে পড়েন নতুন কোনো গন্তব্যে। একা নয়, বরং কাছের বন্ধুদের সঙ্গেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য তিনি। সম্প্রতি থাইল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরেছেন তটিনী। সেখানকার দিনগুলো ছিল শুধু ভ্রমণের নয়, ছিল স্বস্তি, নিরিবিলি পরিবেশ, স্থানীয় মানুষের আন্তরিকতা আর প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো অমূল্য মুহূর্তের এক অপূর্ব মিশেল।
চাকরি-কর্মজীবনের ব্যস্ততায় সময় মেলানো কঠিন
তটিনী জানালেন, “আমার বন্ধুরা এখন প্রায় সবাই চাকরিতে ঢুকে গেছে। ফলে সবার সঙ্গে সময় মেলানো বেশ কষ্টকর। এবারের সফরটা মূলত ওদের সময়ের ওপর নির্ভর করেই ঠিক করেছি। দুই সপ্তাহের এই সফরে চেষ্টা করেছি একসঙ্গে যতটা সময় পার করা যায়, ঠিক ততটাই উপভোগ করতে।”
বন্ধুদের সঙ্গে ফুরফুরে মেজাজে কেটেছে দিনগুলো। আগেও থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন, তবে এবারে গন্তব্য ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। ব্যাংকক বা ফুকেটের মতো ব্যস্ত শহরের চেয়ে এবার তিনি বেছে নিয়েছেন তুলনামূলক শান্ত, নিস্তরঙ্গ দ্বীপসমূহ।
নিরিবিলি দ্বীপজীবন: কোসামুই ও আশপাশের আইল্যান্ড
“কোসামুইতে বেশ কয়েকদিন ছিলাম,” জানালেন তটিনী। “এর আশপাশের আইল্যান্ডগুলোতে একদিন করে থেকেছি। এবারে থাইল্যান্ডের একদম অন্যরকম রূপ দেখেছি। পর্যটকের চাপ কম ছিল। জায়গাগুলো ছিল অনেক বেশি নিরিবিলি, শান্তিপূর্ণ। সেখানকার স্থানীয় মানুষদের আচরণও খুব আন্তরিক। সব মিলিয়ে একটা ভীষণ স্বস্তিদায়ক অভিজ্ঞতা।”
যেকোনো নতুন জায়গায় গেলে সেখানকার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার চেষ্টা করেন তটিনী। তাই এবারে থাইল্যান্ডের ফুকেট ওল্ড টাউনকে ঘুরে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। “প্রতি রোববার সেখানে একটি বাজার বসে, যেখানে ট্র্যাডিশনাল আইটেম পাওয়া যায়। নানা দেশের নানা সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। এবারে অনেক সময় দিয়েছি সেই রঙিন জায়গাটাতে।”
মালয়েশিয়া হয়ে ফেরার পথে
থাইল্যান্ড সফর শেষে মালয়েশিয়ায় ঢুঁ মেরেছেন তটিনী। তবে কুয়ালালামপুর তার কাছে অতটা ভালো লাগেনি। “জায়গাটা অনেক বেশি ভিড়ের। আমার নিরিবিলি, লোকজন কম এমন জায়গা বেশি পছন্দ। সেজন্য একদিনই ছিলাম ওখানে, বেশি ঘোরা হয়নি।”
বিদেশ সফরে গেলে নানা অ্যাডভেঞ্চার করতে ভালো লাগে তটিনীর। এবারের ট্রিপে স্কুবা ডাইভিং করার খুব ইচ্ছে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। কারণ সাঁতার জানা নেই। তবে সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে এমন অ্যাক্টিভিটিতে অংশ নিতেও আগ্রহী তিনি।
শুটিং নয়, ব্যক্তিগত ভ্রমণই বেশি প্রিয়
তটিনীর কথায় জানা গেল, “জীবনে যেসব দেশে গেছি, প্রায় সবই ব্যক্তিগত সফর। শুটিংয়ে শুধু একবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গিয়েছিলাম। তবে দেশে বাইরে শুটিং করতে ভালো লাগে না, কষ্ট লাগে। বরং বন্ধুরা সঙ্গে থাকলে বিদেশ সফরের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। থাইল্যান্ডের মতো জায়গা বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরার জন্য একেবারে পারফেক্ট।”
প্রথম ভ্রমণের স্মৃতি, কাশ্মীরের প্রেম
প্রথম বিদেশ সফরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “প্রথমবার কাশ্মীর গিয়েছিলাম। আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর একটি। প্রকৃতি যেন এখানে নিজের হাতে সাজিয়ে রেখেছে সবকিছু। পেহেলগাম, দার্জিলিং— এসব জায়গার আলাদা একটা টান আছে।”
প্রিয় নেপাল, দার্জিলিং এবং থামেল
নেপালে তিনবার গিয়েছেন তটিনী। কাঠমান্ডুর থামেল এলাকার প্রতি রয়েছে তার বিশেষ টান। “থামেল আমার প্রিয় জায়গাগুলোর একটি। চারবার গেছি সেখানে। এখানকার প্রতিটি রাস্তা, দোকান, পরিবেশ—সব কিছুই খুব রঙিন মনে হয়। শুধু বিদেশ না, দেশের মধ্যেও আমার পছন্দের জায়গা অনেক।”
দেশেই ঘোরার আনন্দ কম নয়
তটিনী বলেন, “সবসময় যে বিদেশে ঘুরতে যেতে হবে তা না। দেশে অনেক দারুণ জায়গা আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট আমার খুব পছন্দের। সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকাও আমার খুব ভালো লাগে। সেখানে গিয়ে এক ধরণের প্রশান্তি মেলে।”
খাবার নিয়ে বাছবিচার নেই
ভ্রমণে গেলে নতুন খাবার চেখে দেখার ইচ্ছেও প্রবল তটিনীর মধ্যে। “হালাল খাবারের মধ্য থেকে যতটা পারা যায় খাওয়ার চেষ্টা করি। তবে মাঝেমধ্যে স্ট্রিট ফুডও খাই। নতুন খাবারের স্বাদ নিতে ভালো লাগে।”
নিজের খাবারের রুচি নিয়ে বলেন, “আমার বন্ধুরা ট্যুরে গিয়ে এক সপ্তাহ না যেতেই ভাত খেতে চায়। আমি বরং নুডলস দিয়েই দিন পার করে দিতে পারি। ভাত না খেলেও চলবে, কিন্তু ঘোরার আনন্দ ছাড়তে পারি না।”
ভ্রমণ মানেই তৃপ্তি
সবশেষে তটিনী বললেন, “ভ্রমণ আমার কাছে শুধু স্থান পরিবর্তন নয়, মানসিক প্রশান্তি, নতুন অভিজ্ঞতা আর নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের সুযোগ। কখনো বন্ধুদের সঙ্গে, কখনো একা—প্রতিটি সফরেই আমি নতুন কিছু শিখি, নতুন কিছু অনুভব করি। হয়তো এ বছর আর কোনো সফর হবে না, তাই সময় নিয়েই এবারে বের হয়েছিলাম। এখন মনটা একদম ভরে গেছে।”
তটিনীর এই ভ্রমণ কাহিনি প্রমাণ করে, ঘোরাঘুরি শুধু একটা শখ নয়—এ এক জীবনচর্চা, যেখানে বন্ধু, প্রকৃতি, খাবার আর অভিজ্ঞতা সব একসঙ্গে মিশে যায় এক রঙিন ছবিতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ