
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে টানা বৃষ্টিপাত ও বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃষ্টির পাশাপাশি তাপমাত্রাও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা আর্দ্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রায় নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। বৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বর্তমানে পানিতে ডুবেছে। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের অন্তর্গত ২২৬টি গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি, সড়কপথ, পুকুর এবং চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড জলাবদ্ধতার কারণে তারা আমন ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। এই অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আসন্ন চাষাবাদের মৌসুম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তা ও অবকাঠামোর কারণে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভীষণ অসুবিধা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও রোগীদের জন্য আশপাশে সেবা গ্রহণের সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
বন্যার পানিতে দুর্বিষহ জীবনযাপনকারী ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া গ্রামে গতকাল বুধবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করেছে। বিজিবির ৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের আয়োজনে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজন করা মেডিকেল ক্যাম্পে প্রায় ১,৫০০ জন বন্যার্ত গ্রামবাসীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এতে শারীরিকভাবে দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তিরা সুষ্ঠু সেবা পেয়েছে।
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার এক কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল হান্নান জাফর (২৫) বজ্রপাতে মারা গেছেন। তিনি আক্কেলপুর এমআর ডিগ্রি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বজ্রপাতে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর খবর এলাকায় শোকের ছায়া ফেলে দিয়েছে।
নাটোরের লালপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রীসুন্দরী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় অচল হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে, যার কারণে শিক্ষার্থীরা পচা ড্রেনের নোংরা পানি পার হয়ে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবস্থা খুবই খারাপ, যা সময়মতো সংস্কারের অভাবে আরও অবনতি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত স্থায়ী কোনো সমাধান আসেনি। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও শিক্ষার মানে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকবে। এর সঙ্গে তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পারে, যা আর্দ্রতা এবং পরিবেশগত চাপ বৃদ্ধি করবে। এ ধরনের আবহাওয়া পরিস্থিতি কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করবে, বন্যার ঝুঁকি বাড়াবে এবং জনজীবনে অস্থিরতা তৈরি করবে।
টানা বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, বিশেষ করে আমন ধানের বীজতলা তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষিপ্রধান অর্থনীতির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কারণে সড়ক যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পণ্য পরিবহনেও বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করবে।
সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সময়োপযোগী, ব্যাপক এবং কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। সঙ্গে রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমের গতিশীলতা বাড়ানোর প্রয়োজন। কৃষকদের জন্য প্রয়োজন প্রকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন।
সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উচিত অবিলম্বে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়ে দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা।
দেশবাসীকে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর, একই সঙ্গে সবাইকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ ও অস্বস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ