
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, গোপালগঞ্জে তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে ‘মুজিববাদী আদর্শে বিশ্বাসী সন্ত্রাসীরা’ পূর্বপরিকল্পিতভাবে জঙ্গি কায়দায় হামলা চালিয়েছে। এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল গণঅভ্যুত্থানকে নেতৃত্বদানকারী এনসিপি নেতাদের সরাসরি হত্যা করা। তিনি এ হামলাকে শুধুই সহিংসতা নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন তিনি। এতে উপস্থিত ছিলেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “গোপালগঞ্জে যে হামলা চালানো হয়েছে তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের একটি অপচেষ্টা। সন্ত্রাসীরা জঙ্গি স্টাইলে হামলা চালিয়েছে, যেন আমরা পদযাত্রার মঞ্চেই প্রাণ হারাই।” তিনি জানান, হামলায় এনসিপির তিনজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের এই পদযাত্রার কর্মসূচি ১ জুলাইয়ের আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। সুতরাং এতদিন সময় নিয়ে যারা হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে, তারা সরাসরি সরকার-সমর্থিত চক্র। গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের মামলার আসামিরা সেখানে জড়ো হয়ে আমাদের কর্মসূচিতে আক্রমণ চালিয়েছে।”
নাহিদ আরও বলেন, “সারা দেশে একটা প্রচলিত মিথ চালু ছিল যে, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো দল কর্মসূচি পালন করতে পারবে না। সেই মিথকে আমরা ভেঙে দিয়েছি। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে, আওয়ামী লীগের দুর্গেও গণতন্ত্রের দাবিতে আওয়াজ তোলা সম্ভব।”
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুটা সহায়তা করলেও হামলার সময় তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। “স্টেজে যখন হামলা চালানো হয়, তখন পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি পুলিশের গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের কেউ কি হামলাকারীদের সহায়তা করেছে? বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার,” বলেন নাহিদ।
নাহিদ বলেন, “এটা শুধু একটি মিছিল ভাঙার ঘটনা নয়। এটা গণঅভ্যুত্থান থামানোর চক্রান্ত। যারা মুজিববাদের নামে জুলুম চালাচ্ছে, এনসিপি তাদের বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”
তিনি জানান, পদযাত্রা শেষে এনসিপির নেতারা শরিয়তপুর ও মাদারীপুরে ফেরার পথে আক্রান্ত হন। এই ঘটনায় আপাতত দুটি জেলার কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের হামলার প্রতিবাদে এনসিপি বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। নাহিদ বলেন, “এই হামলা শুধু এনসিপির বিরুদ্ধে নয়, দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে। তাই আমরা সারা দেশের মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি, মুজিববাদী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামুন।”
তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষের প্রতি, যারা এনসিপির এই দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, “এই হামলা কেবল শারীরিক নয়, এটি রাজনৈতিক নিধনের অপচেষ্টা। আমরা দাবি জানাই—এই হামলার দায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। নইলে দেশের জনগণই তাদের জবাব দেবে।”
এসময় সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালক ও দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয় শাসন কায়েমের চেষ্টা করছে। এনসিপি সেই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় বাধা বলেই আমাদের ওপর এমন নিষ্ঠুর হামলা চালানো হয়েছে।”
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনা এবং নাহিদ ইসলামের ‘জঙ্গি কায়দায় হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে বিরোধী পক্ষ বলছে সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা দেশের রাজনীতিতে নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার পরিণতি আগামী দিনে আরও ভয়াবহ হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ