
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংঘটিত গুমের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে বিএনপি।
রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে অভিযোগপত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান। তার সঙ্গে ছিলেন অভিযোগকারীরা ও ভুক্তভোগী পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে বর্তমান সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম করা হয়, যার মধ্যে ১১টি ঘটনাকে প্রাথমিকভাবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব গুমের ঘটনায় তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন খান বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। এ অভিযোগে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য, ঘটনার তারিখ, স্থান, এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের বয়ান সংযুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দাবি, এ গুমগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যাতে বিরোধী দলের কণ্ঠ রোধ করা যায়।"
তিনি আরও বলেন, "এসব ঘটনায় যারা গুম হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তারা শুধু ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়ার অপরাধে নিখোঁজ হয়েছেন। এদের কেউই এখনো ফিরে আসেননি বা তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।"
এ সময় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, তাদের প্রিয়জনদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো মামলা বা অভিযোগ তদন্ত হয়নি, বরং রাষ্ট্রীয় সংস্থার পক্ষ থেকে বারবার অস্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এক মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার ছেলে রাজনীতি করতো, কিন্তু কোনো অপরাধ করেনি। ২০২১ সালে সে নিখোঁজ হয়, আজও আমরা জানি না সে বেঁচে আছে কি না।"
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তারা অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছেন এবং প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে নিয়ম অনুযায়ী তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “যেকোনো অভিযোগ আইনের আওতায় পড়লে, তা তদন্ত করা ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব। আমরা নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি দেখব।”
অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনা ছাড়াও নাম এসেছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন সচিব, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমেদ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সাবেক মন্ত্রীদের।
এদিকে বিএনপি এই পদক্ষেপকে 'ঐতিহাসিক' দাবি করে বলছে, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারপ্রধানদের দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটানোর একটি আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আন্তর্জাতিক মহলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা।
উল্লেখ্য, এর আগে জাতিসংঘে নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়েও একাধিকবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিএনপি। দলের অভিযোগ, গত ১৫ বছরে শতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, যাদের অবস্থান আজও অজানা।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে এই অভিযোগ নতুন করে সরকার-বিরোধী পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ