
ছবি: সংগৃহীত
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের আলোচিত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যা মামলায় আনসার সদস্যদের কোনো দায়িত্বে অবহেলা ছিল না বলে দাবি করেছেন আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে আনসার সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ওই সময় ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল না কোনো আনসার সদস্যের।
ডিজি জানান, মিটফোর্ড হাসপাতালের নিরাপত্তায় বর্তমানে মোট ৮০ জন আনসার সদস্য কর্মরত আছেন। তবে তাদেরকে শিফট ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে একেক শিফটে কাজ করেন সর্বোচ্চ ৩০ জন। এ ছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি ও লোকবল সংকটের কারণে সব জায়গায় একযোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত গেট ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে দায়িত্বে থাকেন আনসার সদস্যরা। কিন্তু ঘটনার সময়, অর্থাৎ দুপুর ২টার পর, গেটে কোনো আনসার সদস্য দায়িত্বে ছিলেন না। ফলে সোহাগ হত্যাকাণ্ডে আনসার সদস্যদের অবহেলার অভিযোগ বা তাদের ওপর দোষ চাপানোর কোনো সুযোগ নেই।’
ডিজি আরও বলেন, ‘এমন মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের সময় শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, ভিডিও করছিলেন, কিন্তু কেউই নিকটবর্তী আনসার ক্যাম্পে গিয়ে খবর দিতে এগিয়ে আসেননি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাজনক।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের আশপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, যা নিরাপত্তার জন্য একটি বড় ঘাটতি। এই ঘটনার পর আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা কাঠামোয় পরিবর্তন আনবে এবং সিসিটিভির মতো অপরিহার্য উপকরণ যুক্ত করবে।’
এদিকে একইদিনে ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, সোহাগ হত্যাকাণ্ডে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর ফলে মামলায় মোট গ্রেফতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতজনে।
তিনি বলেন, গত ৯ জুলাই দুপুরে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের সড়কে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের ওই ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা ১৯ জন। এখন পর্যন্ত সাতজন গ্রেফতার হলেও বাকিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
ডিসি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ ও গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা ঘটনার মোটিভ জানার চেষ্টা করছি। হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত ছিল, নাকি তাৎক্ষণিক উত্তেজনা থেকে সংঘটিত—তা নির্ধারণে তদন্ত চলছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হয়।
প্রসঙ্গত, ব্যবসায়ী সোহাগ ছিলেন পুরান ঢাকার একজন পরিচিত চামড়া ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অপরাধমূলক অভিযোগ ছিল না বলে জানায় স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দেয় জনমনে।
এই ঘটনার পর হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গণমানুষের সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, দায়মুক্তি বা বাহিনীগুলোর দায় অস্বীকার নয়, বরং সমন্বিত নিরাপত্তা ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করার পথেই বেরিয়ে আসতে পারে এর প্রকৃত সমাধান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ