
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনার আওতায় হজ পালন করা ৪,৯৭৮ জন হজযাত্রীকে ফেরত দেওয়া হবে মোট ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা—এমনটাই জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
রোববার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশ সচিবালয়ের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, হজ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক।
সংবাদ সম্মেলনে ২০২৫ সালের হজ ব্যবস্থাপনা, অর্জন এবং ২০২৬ সালের হজ মৌসুমের সম্ভাব্য পরিকল্পনা তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হজ কার্যক্রমে নির্ধারিত খরচের কিছু অর্থ বেঁচে যায় এবং তা সরকার হজযাত্রীদের মাঝে অনুপাতে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন হজ ব্যবস্থাপনায় গুণগত মান নিশ্চিত করা যায়। খরচ কমানোর পাশাপাশি হাজিদের সর্বোচ্চ সম্মান ও সেবার মান অটুট রাখাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ কার্যক্রমের প্রতি হজযাত্রীদের আস্থা বাড়ছে। এটি আমাদের সবার সম্মিলিত পরিশ্রমের ফল। হজ কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা, মিডিয়ার সহযোগিতা, এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।”
২০২৬ সালের হজ সম্পর্কে তিনি জানান, হজ ব্যয় আরও কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সে লক্ষ্যে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি স্বাক্ষরের পরিকল্পনা রয়েছে।
“আগাম পরিকল্পনা ও বাস্তবভিত্তিক কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এমন একটি হজ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে সেবা, স্বচ্ছতা এবং কম ব্যয়ে অধিক কার্যকারিতা থাকবে,”—বলেন ধর্ম উপদেষ্টা।
এ সময় তিনি হজযাত্রীদের তথ্য সুরক্ষা, সুষ্ঠু হজ ফ্লাইট ব্যবস্থাপনা, মোয়াল্লেম ও গাইডদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং হজক্যাম্পে যুগোপযোগী সেবা চালু রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এবারের হজ মৌসুমে কিছু দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের হজ পালনের সময় সৌদি আরবে ৪৫ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন। মৃতদের মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী।
হজ অফিসের বুলেটিন অনুযায়ী, মৃত্যুর পেছনে বার্ধক্যজনিত জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ তাপমাত্রা এবং দীর্ঘ শারীরিক পরিশ্রম অন্যতম কারণ ছিল। হজে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের বেশির ভাগই বয়স্ক হওয়ায় অনেকের ক্ষেত্রে হজের সময়ের অতিরিক্ত শারীরিক চাপ প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১৫৭ জন হজ পালন করেছেন। হজযাত্রা শুরু হয় ২৯ এপ্রিল এবং শেষ ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ৩১ মে। পবিত্র হজ পালিত হয় ৫ জুন এবং ফিরতি হজ ফ্লাইট শেষ হয় ১০ জুলাই।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “এই বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীদের সফলভাবে পরিচালনা করতে আমরা বাংলাদেশ মিশন, হজ অফিস, চিকিৎসা টিম এবং হজ এজেন্সিগুলোর সমন্বিত সহযোগিতা পেয়েছি।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “ভবিষ্যতের হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ একটি অনুকরণীয় মডেল হতে পারে। আমরা চাই, আমাদের প্রত্যেক হজযাত্রী যেন নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরতে পারেন।”
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, হজ ব্যয় হ্রাস, বেঁচে যাওয়া অর্থ ফেরত, আগাম পরিকল্পনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা ব্যবস্থাপনা—এই চারটি দিককে ভিত্তি করে হজ ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ