
ছবি: সংগৃহীত
আজ শুক্রবার (১৬ মহররম ১৪৪৬ হিজরি, ১১ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ) বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় আবেগ ও শ্রদ্ধার কেন্দ্রবিন্দু পবিত্র দুই মসজিদ—মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন দুই প্রখ্যাত ইসলামী মনীষী ও শায়খ। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির পরিচালনা কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। প্রতিটি জুমার দিন মুসলিম বিশ্বের নজর থাকে এই দুই পবিত্র স্থানের খতিব ও ইমামদের দিকে, যাঁদের ভাষণে উচ্চারিত হয় ইমান জাগানিয়া কথা, ইসলামের মূলনীতি এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে নসিহত।
আজকের জুমায় পবিত্র মসজিদে হারামে ইমামতি ও খুতবা প্রদান করবেন বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামি চিন্তাবিদ, প্রবীণ ক্বারি ও পণ্ডিত শায়খ ড. বানদার বিন আবদুল আজিজ বালিলাহ। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মসজিদে হারামের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন এবং তার হৃদয়ছোঁয়া কোরআন তেলাওয়াত, স্পষ্ট বক্তব্য এবং ভারসাম্যপূর্ণ দীনী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
শায়খ বালিলাহ ১৯৭৫ সালে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কা মুকাররমায় জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মীয় শিক্ষায় তার আগ্রহ শৈশব থেকেই ছিল। তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামি শরিয়ায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ইসলামি ফিকহ বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তার শিক্ষাজীবনের পরবর্তী গৌরবময় অধ্যায় শুরু হয় মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি ২০০৮ সালে ইসলামি আইন শাস্ত্রে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষাজীবনের গৌরবের পাশাপাশি শায়খ বালিলাহর কর্মজীবনও বিস্তৃত ও প্রভাববিস্তারকারী। ২০১৩ সালে তাকে পবিত্র কাবা শরিফের ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে তিনি মক্কার বিভিন্ন বড় বড় মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর খুতবা ও ইমামতিতে সাধারণত সমাজ সংস্কার, আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া ও মুসলিম ঐক্যের বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
অন্যদিকে আজকের পবিত্র জুমার দিনে মসজিদে নববিতে খুতবা ও ইমামতির দায়িত্ব পালন করবেন আরেক প্রসিদ্ধ ইসলামি পণ্ডিত ও কোরআনের হাফেজ শায়খ ড. খালিদ ইবনে সুলাইমান ইবনে আবদুল্লাহ আল মুহান্না। তিনি বর্তমান সময়ের অন্যতম জ্ঞানী আলেম ও প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ, যিনি ইসলামের গভীর জ্ঞান ও অনুশীলনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত।
১৯৭৬ সালে সৌদি আরবের আল-আহসা অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন শায়খ খালিদ। তার পরিবার ইসলামি জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত—তার পিতা শায়খ সুলাইমান ইবনে আব্দুল্লাহ ছিলেন একজন বিজ্ঞ বিচারক ও প্রখ্যাত আলেম, যিনি দীর্ঘদিন রিয়াদের পাবলিক কোর্টে কর্মরত ছিলেন। শায়খ খালিদ অল্প বয়সেই সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন এবং পরবর্তীতে ইলমে শরিয়া ও আকিদা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন।
তিনি ১৯৯৭ সালে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলে দ্বীনের উপর অনার্স সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে ২০০৩ সালে মাস্টার্স ও ২০০৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ইসলামী জগতে শ্রদ্ধেয় শায়খ আবদুল্লাহ বিন বাজ (রহ.) এবং আবদুল্লাহ বিন আকিল (রহ.), যাদের সংস্পর্শে তিনি ইসলামি চিন্তায় পরিপূর্ণতা অর্জন করেন।
ড. আল মুহান্না ১৯৯৭ সালেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলে দ্বীন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০০৯ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক হন। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের রমজান মাসে মসজিদে নববিতে ইমামতি করার গৌরব অর্জন করেন। আজকের দিনে আবারও তার কণ্ঠে মসজিদে নববির মিম্বর থেকে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে পঠিত হবে আল্লাহর কালাম ও রাসূলের (সা.) হাদিসভিত্তিক মূল্যবান নসিহত।
আজকের দিনে পবিত্র দুই মসজিদে—মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববি—দুই জন যোগ্য, আলোকিত ও বহুমাত্রিক আলেম ইমামতি করছেন, যা সৌভাগ্যের ও বরকতের একটি মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের জন্য। দুই শায়খের জীবন-চরিত, ইসলামি জ্ঞান, পাণ্ডিত্য ও দীনী শিক্ষা অনুপ্রেরণা জোগাবে কোটি কোটি মুসলমানকে। তাঁদের খুতবাগুলো সরাসরি সম্প্রচারিত হবে সউদির রাষ্ট্রীয় টিভি, হারামাইন চ্যানেল ও বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে, যেখান থেকে বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা তা শুনতে পারবেন।
ইসলামি ঐতিহ্য ও ইমানি অনুপ্রেরণার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চে আজ যে দুই আলেমের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে পবিত্র খুতবা—তা শুধুই একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের আত্মিক ও নৈতিক চেতনা জাগিয়ে তুলবে। এই দিনে তাঁরা যা বলবেন, তার প্রতিটি শব্দ, উপদেশ এবং দিকনির্দেশনা মুসলিম সমাজের জন্য হতে পারে একটি চলার পাথেয়, ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের দিশা।
সূত্র: ইনসাইড দ্য হারামাইন
বাংলাবার্তা/এমএইচ