
ছবি: সংগৃহীত
চোখেমুখে সেই পুরোনো তেজ, ব্যাটে-বলে আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি, আর মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এক বিশ্বমানের অলরাউন্ডারের নিয়ন্ত্রিত অথচ বিধ্বংসী প্রভাব—হ্যাঁ, গ্লোবাল সুপার লিগের (জিএসএল) অভিষেক ম্যাচেই আবারও সেই চেনা সাকিব আল হাসানে মুগ্ধ হলো ক্রিকেট বিশ্ব।
টুর্নামেন্টে দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেই ব্যাটে-বলে সমান তাণ্ডব চালিয়ে দলকে এনে দিলেন দারুণ এক জয়। ব্যাট হাতে খেলেছেন ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি, বল হাতে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ চার উইকেট। আর এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্সেই নিউজিল্যান্ডের ফ্র্যাঞ্চাইজি সেন্ট্রাল স্ট্যাগসকে ২২ রানে হারিয়েছে দুবাই ক্যাপিটালস। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে সাকিবের হাতেই।
ক্যারিয়ারে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পর ফের একবার নিজের সামর্থ্যের জানান দিলেন বাংলাদেশের পোস্টারবয়। মাঠে নামার আগেই চোখের সমস্যাকে ঘিরে ছিলো অনিশ্চয়তা, পিএসএলে ছিলো হতাশাজনক পারফরম্যান্স। কিন্তু অভিষেক ম্যাচেই সব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের পূর্ণ প্রদর্শন দিলেন সাকিব।
দুবাই ক্যাপিটালসের ইনিংস যখন ধুঁকছিল ৫৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে, তখন ব্যাট হাতে ক্রিজে আসেন তিনি। চাপে পড়া দলকে টেনে তুললেন নিজের ব্যাটিং দক্ষতায়। মাত্র ৩৪ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৫৮ রানের এক কার্যকরী ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন। ইনিংসে ছিলো ৭টি চারের মার এবং একটি ছক্কার শট। স্ট্রাইকরেট ১৫০ ছাড়িয়ে যায়, যা টি-টোয়েন্টির প্রেক্ষাপটে এক কথায় দুর্দান্ত।
এই ইনিংসের ওপর ভর করেই দুবাই ক্যাপিটালস সংগ্রহ করে ১৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। ম্যাচের প্রেক্ষাপটে সাকিবের ইনিংস শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং ছিলো ম্যাচ নির্ধারণী।
ব্যাটিংয়ের পর বল হাতে যেন আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন সাকিব আল হাসান। প্রতিপক্ষের টপ অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে কার্যত ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেন সেন্ট্রাল স্ট্যাগসকে। নিজের প্রথম ওভারেই (পঞ্চম ওভার) জোড়া আঘাত হানেন। প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন উইল ইয়াংকে। একই ওভারে তুলে নেন ডানি ক্লেভারের উইকেটও। পুরো ওভারটি ছিলো ডাবল মেডেন, অর্থাৎ এক রানও না দিয়ে দুই উইকেট শিকার।
১১তম ওভারে ফের বোলিংয়ে এসে মার খান একটি চার, কিন্তু ঠিক সেই ওভারের শেষ বলেই ফেরান সেট হওয়া ব্যাটার জশ ক্লার্কসনকে। তৃতীয় ওভারে উইকেট না পেলেও দারুণ নিয়ন্ত্রিত ছিলেন। নিজের শেষ ওভারে এসে চতুর্থ বলেই ফেরান উইলিয়াম ক্লার্ককে, যিনি ইতোমধ্যে ২০ রান করে ফেলেছিলেন।
মোট চার ওভার বোলিং করে মাত্র ১৩ রান দিয়ে তুলে নেন ৪ উইকেট। এই স্পেলে ছিলো টাইট লাইন-লেংথ, ভ্যারিয়েশন এবং নিখুঁত গেম সেন্স। ব্যাটিং, বোলিং—দুয়েতেই পারফেকশন দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিজ্ঞতা এখনও বিশ্বের যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বড় সম্পদ।
এই ম্যাচে চার উইকেট তুলে নিয়ে সাকিব আল হাসানের স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোট উইকেট সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৯৭টি। অর্থাৎ মাত্র তিন উইকেট দূরে তিনি ঐতিহাসিক ৫০০ উইকেটের মাইলফলক থেকে। বিশ্ব ক্রিকেটে এই সংখ্যাটি স্পর্শ করেছেন মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন। চলমান গ্লোবাল সুপার লিগেই তিনি এই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এবারের গ্লোবাল সুপার লিগে সাকিবের খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের রংপুর রাইডার্স দলের হয়ে। কিন্তু নানা জটিলতায় শেষপর্যন্ত তাঁকে রাখা হয়নি স্কোয়াডে। এই সুযোগটাই লুফে নেয় দুবাই ক্যাপিটালস, এবং প্রথম ম্যাচেই তাঁকে একাদশে জায়গা দেয়। সাকিবও সেই আস্থার পূর্ণ প্রতিদান দেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
পাল্লেকেলেতে যখন বাংলাদেশ দল ব্যর্থতায় বিপর্যস্ত, ঠিক তখন গায়ানার গ্লোবাল সুপার লিগে সাকিব আল হাসান হাসছিলেন তৃপ্তির হাসি। একা হাতে দলকে জিতিয়ে আবারও প্রমাণ করলেন, অভিজ্ঞতা, সামর্থ্য আর সংকটময় মুহূর্তে স্নায়ু নিয়ন্ত্রণের দিক দিয়ে এখনও তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের একজন। ব্যাটে-বলে এই ধারাবাহিকতা থাকলে খুব শিগগিরই দেখা যাবে সাকিবকে নতুন উচ্চতায়, নতুন ইতিহাস গড়তে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ