
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে চলতি মৌসুমের বন্যা ও অতিবৃষ্টির ফলে ব্যাপক পরিমাণ ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গরিষ্ঠ ফসল ধ্বংসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশের ২১ জেলায় মোট ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর ফসলি জমি বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তলিয়ে গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাতে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে এই অস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেশের কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হিসেবে কাজ করেছে।
এ কারণে মাঠে থাকা আউশ ধানের পাশাপাশি আমন বীজতলা, বোনা আমন, পাট, শাকসবজি, ফলবাগান, পান, তরমুজসহ নানাবিধ ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গড়ে শতকরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও শরীয়তপুর—মোট ২১ জেলায় ব্যাপক পরিমাণ জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
বিশেষ করে কুমিল্লা জেলায় ১১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আউশ, আমন, শাকসবজি, মরিচ ও আখসহ বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। নোয়াখালী জেলায় ৭ হাজার ৮০৬ হেক্টর এবং ফেনী জেলায় ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোট ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে আউশ ধান, যার নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ৪৪ হাজার ৬৬২ হেক্টর। আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৩ হেক্টরে, পাট ১৩৫ হেক্টরে, শাকসবজি ৯ হাজার ৬৭৩ হেক্টরে, কলা ১১৪ হেক্টরে এবং পেঁপে ২৯৩ হেক্টরে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া পান গাছের ক্ষেত্রেও ৩৮৭ হেক্টর, বোনা আমন ২৯৭ হেক্টর, মরিচ ১০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন তরমুজ ২৮১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃষ্টিপাত কমতে শুরু করায় নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমছে। তবে কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের জন্য এর ক্ষতির পরিমাণ ও পরবর্তী প্রভাব নিয়ে শঙ্কা থাকায় দ্রুত যথাযথ সহযোগিতা ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির বিষয়েও শঙ্কা রয়েছে, যা সামাজিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা, ফসল পুনরুদ্ধার, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ বন্যা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া বন্যা প্রবণ এলাকায় বন্যা প্রতিরোধক অবকাঠামো নির্মাণে গতি দিতে হবে।
সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি সহায়তা পৌঁছে দিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে কৃষিক্ষেত্রে যে বিশাল ক্ষতি হয়েছে তা দেশের কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হবে। সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জীবনযাত্রা ও দেশের খাদ্য উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ