
ছবি: সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এক ভয়াবহ ঘটনায় সেপটিক ট্যাংকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে চার তরুণ বিষক্রিয়ায় নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনা ঘটেছে উপজেলার হরিণছড়া চা বাগানে, যেখানে নিহতরা সবাই চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান। এছাড়া একজন গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রণয় কান্তি দাশ জানান, একজনের মোবাইল ফোন সেপটিক ট্যাংকে পড়ে গেলে তা উদ্ধার করার চেষ্টা চালাতে চারজন তরুণ ট্যাংকে নামেন। সেই সঙ্গে তারা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একে একে মারা যান। তাঁদের নাম রানা নায়ক (১৭), শ্রাবণ নায়েক (১৯), কৃষ্ণ রবিদাস (২০) ও নিপেন ফুলমালি (২৭)। আহত ব্যক্তি রবি বুনার্জী (২০)কে দ্রুত সিলেট ওসমানী হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সব্যসাচী পাল তমাল বলেন, রাত পৌনে ১টার দিকে চারটি মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়, প্রায় এক ঘণ্টা পর আহত এক তরুণ হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, "এক রিঙের সেপটিক ট্যাংকে এতটা টক্সিক গ্যাস কিভাবে জমেছে, সেটা পরিষ্কার হওয়া জরুরি।"
ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিরূপণ করা হবে বলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, তারা দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাত দেড়টার দিকে এই দুর্ঘটনার খবর পেয়েছেন এবং পুলিশি অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, "এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের চা শ্রমিক পরিবারের জন্য এক কঠিন ক্ষতি। একে একে চারজন তরুণ সেপটিক ট্যাংকে নামার ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে।"
পংকজ কন্দ আরও বলেন, চারজনের অসুস্থ হওয়ার পর রবি বুনার্জী তাদের উদ্ধার করতে সেপটিক ট্যাংকের নিচে নামেন। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে জাস্টিন নামে আরেক তরুণ এসে রবি বুনার্জীকে উদ্ধার করেন, কিন্তু তিনি নিজেও অসুস্থ হন।
এই পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায়, সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে বিষক্রিয়া ও টক্সিক গ্যাস কতটা মারাত্মক হতে পারে এবং তা উদ্ধার কাজে নিযুক্তদের জন্য কত বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
এই দুর্ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, সেপটিক ট্যাংকের মতো বিপজ্জনক এলাকায় কাজ করার সময় যথাযথ নিরাপত্তা ও সতর্কতা অবলম্বন না করায় প্রাণহানির মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ ধরনের জায়গায় সেফটি গাইডলাইন জারি করা ও মানুষকে সচেতন করা।
মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে সেপটিক ট্যাংকে চার তরুণের মৃত্যু দেশের শ্রমজীবী মানুষের জন্য এক মর্মান্তিক ঘটনা। এই দুর্ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত শোক নয়, বরং দরকার নিয়ে আসে কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধি কঠোর করার, যেখানে বিশেষ করে শ্রমজীবীরা অজান্তেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় এবং বিশেষ করে শ্রমজীবী পরিবারের সন্তানদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে, সে দিকে নজর দেয়, এটাই প্রত্যাশা।
দুর্ঘটনার ঘটনার ধারা ও পরবর্তী পদক্ষেপ অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ